
ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঢাকার কর অঞ্চল-৫, সার্কেল-৯০ (কোম্পানি) অফিসে অভিযান চালিয়ে ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির একটি গুরুতর ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ আয়কর নথি গায়েব করার প্রমাণ পেয়েছে। এনবিআর-র একটি করদাতা কোম্পানির বিরুদ্ধে এই বিশাল রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগে গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ ঘটনায় এনবিআরের সংশ্লিষ্ট অফিসে নথিপত্র গায়েব করার পেছনে অসাধু কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযানের সময় কর নির্ধারণ সংক্রান্ত মূল ফাইলগুলো পাওয়া যায়নি, যা উদ্দেশ্যমূলকভাবে গায়েব করা হয়েছে বলে দলের সদস্যদের ধারণা। ২০২২-২৩ কর বর্ষের মাসিক কর নির্ধারণ রেজিস্ট্রার ৪-এর নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা থেকে দেখা যায়, টিআইএনধারী একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সরকার কর্তৃক কর মওকুফ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
এতে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ কর বর্ষের দুটি মামলার বিপরীতে নির্ধারিত আয় অনুযায়ী ৭২ কোটি ৯৬ লাখ এবং ৭৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার কর দাবির পরিমাণ যথাক্রমে ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা হলেও, পরে কর দাবিটি শূন্য টাকা ও মাত্র ১ হাজার ২৯৯ টাকায় পরিবর্তিত হয়েছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
এনবিআরের নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা ঘুষের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর মওকুফ করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি সাধন করেছেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক গতকাল মোহাম্মদপুরের সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে দলিল যাচাইয়ের জন্য অভিযান চালায়।
এছাড়া, ভূমি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিদর্শন চালানো হয়েছে। এই ব্যাপক তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম সংগৃহীত নথিপত্র ও তথ্যের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণের পর বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে জমা দেবে। এটি ভবিষ্যতে বৃহত্তর দুর্নীতি চক্রের রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এ অভিযান সম্পর্কে সমকালকে নিশ্চিত করেছেন এবং জানান, এই ধরনের অভিযান দেশের রাজস্ব সুরক্ষায় দুদকের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন।
রাজস্ব ফাঁকি, কর ফাঁকি ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের বড় ক্ষতি করার ঘটনা নতুন নয়, তবে ১৪৬ কোটি টাকার মতো বৃহৎ অংকের কর ফাঁকির নথি গায়েব করার ঘটনা দেশে কর ব্যবস্থাপনায় গভীর দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের রাজস্ব আয় সুরক্ষায় এবং কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে সরকারি তহবিল সঠিকভাবে রক্ষিত হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পে যথাযথ বরাদ্দ নিশ্চিত হয়।
দুদকের সাম্প্রতিক অভিযান ও অনুসন্ধান দেখাচ্ছে, সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা এবং দুর্নীতি দমন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সচেতনতা ও উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা এবং অসাধু কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হলে আরো শক্তিশালী এবং নিয়মিত তদারকি ও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকির নথি গায়েবের ঘটনা দেশের কর ব্যবস্থার জন্য বড় সংকেত ও সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ