
ছবি: সংগৃহীত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন রোজার শুরু হওয়ার আগেই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সরকারি মহলে সূত্র জানা গেছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দেশের সর্বোচ্চ নির্বাচন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাপ্ত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধি পর্যন্ত নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আজ প্রায় দুই ঘণ্টা নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধান নির্দেশনা ছিল—নির্বাচন-ঘটিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে।”
নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডে মোট ১৭ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে এবং তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ যেন ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
“নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখে—এমন নির্দেশনাও প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন,” সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের বলেন, “নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় নতুন নিয়োগ করতে হবে, তাহলে তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। নতুন নিয়োগকৃত সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিদিন ট্রেনিং চলবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগের নির্বাচনগুলো ছিল ‘লোক দেখানো নির্বাচন’। এবার সবাইকে ট্রেনিং দিতে হবে, কার কী দায়িত্ব তা স্পষ্ট করতে হবে। দরকার হলে নির্বাচনের রিহার্সালও করতে হবে যাতে সবাই নিজেদের কাজ অনুশীলন করতে পারে।”
ভোটারদের ভোটাধিকার ও নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভোটারদের জন্য নির্বাচনের নিয়ম-কানুন নিয়ে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। এসব ভিডিও টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে। যাতে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পায়।”
এছাড়া, জরুরি যোগাযোগ নম্বরগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যেন কোনো ভোটারের কোনো অসুবিধা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা পেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা চাইছেন, ভোটারদের সরাসরি কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা হোক।
জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী ভোটার রয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা নারীদের ভোটাধিকার যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। “নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নারী সদস্য ও কর্মকর্তাদের মোতায়েন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নারীরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন,” বলেন তিনি।
যারা প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন, তাদের জন্যও প্রধান উপদেষ্টা আলাদা মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বর্তমান সময়ের প্রথম ভোটাররা ১৬ বছর ধরে ভোটের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাদের স্মৃতিতে ভোটকেন্দ্রে মারামারি, ভোটচুরি ইত্যাদির ছবি রয়েছে। আগামী নির্বাচনে তাদের যেন একটি সুন্দর ও গৌরবময় অভিজ্ঞতা হয়।”
এই তরুণ ভোটারদের জন্য ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রাখা হবে, যাতে তারা নিজেদের ভোটাধিকার ব্যবহারে আত্মবিশ্বাসী হয় এবং ভোট দেয়ার প্রতি উৎসাহী হয়। এটি দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতির জন্য এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হবে বলেও মত প্রধান উপদেষ্টার।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ভোটের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে প্রধান উপদেষ্টার এতটা বিস্তৃত ও বিস্তারিত নির্দেশনা বিরল। রোজার শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোটার সচেতনতা ও নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার এই নির্দেশনা দেশজুড়ে নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রমকে গতিশীল ও সংগঠিত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আগামী মাসগুলোতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের প্রয়াস দেশের জনগণের মাঝে নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ