
ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে আরও পাঁচটি দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরির অনুমতি পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে করে বিদেশে অবস্থানরত লাখো বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পথে আরও এক ধাপ অগ্রসর হলো কমিশন। নতুন এই পাঁচ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমান।
এ নিয়ে বর্তমানে ১৪টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পেল নির্বাচন কমিশন। ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বুধবার (১০ জুলাই) সাংবাদিকদের জানান, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য নতুন করে ৮টি দেশের অনুমতির আবেদন পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে আপাতত পাঁচটি দেশের অনুমোদন মিলেছে।”
বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ১৬টি স্টেশনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়া জাপানে নতুন করে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে দূতাবাসকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই জাপানে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ৪০টি দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর অংশ হিসেবেই ধাপে ধাপে নতুন দেশগুলোতে এই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান থাকা ৯টি দেশ থেকে মোট ৪৭,৩৮০টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৩,৬৯২টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ফলে বৈধ আবেদনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩,৬৮৮টি।
আবেদন বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে—অনুপযুক্ত কাগজপত্র, বয়স সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যতা, আগেই বাংলাদেশে ভোটার হয়ে থাকাসহ অন্যান্য কারিগরি ত্রুটি। নির্বাচন কমিশন জানায়, যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) ই-পোস্টের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ উদ্যোগ শুধু ভোটার তালিকাকে সমৃদ্ধই করছে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও শক্তিশালী করছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলে দেশের রাজনীতিতেও প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। একদিকে অভিবাসী আয় নির্ভর অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা স্বীকৃতি পাবে, অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ বাড়বে।
যদিও এখনো স্পষ্ট নয়, প্রবাসীরা কবে নাগাদ সরাসরি নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তবে নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, যেসব দেশে বর্তমানে ভোটার নিবন্ধন চলছে, সেখানে ধাপে ধাপে দূতাবাসে ই-ভোটিং বুথ স্থাপনের চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত ও আইনি কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ই-ভোটিং বা পোস্টাল ভোটের মাধ্যমে প্রবাসীদের সরাসরি ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করা গেলে তা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
তবে সবকিছুই যে মসৃণ, তা নয়। বিভিন্ন দেশে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কারিগরি সমস্যা, দলিল যাচাইয়ের জটিলতা, দূতাবাসের সক্ষমতা, আইনি প্রতিবন্ধকতা এবং পর্যাপ্ত জনবল সংকট অন্যতম বাধা হিসেবে উঠে এসেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে বিদেশ মিশনগুলোর সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় সভা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সফটওয়্যার হালনাগাদ, কর্মী প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ চলছে।
সব মিলিয়ে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার এই ধারা দেশের গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমানে ভোটার নিবন্ধন অনুমোদন নিঃসন্দেহে এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়েছে এক ধাপ। এখন চ্যালেঞ্জ হলো, এই কার্যক্রমকে কতটা দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই তা কতটা কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ