
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত জুটি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের গোপন বিয়ের খবর আজ আর কারও অজানা নয়। তবে তাদের সম্পর্ক, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, সন্তান জন্ম, ধর্ম পরিবর্তন এবং বিচ্ছেদ—সব কিছু নিয়েই বছরজুড়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অপু বিশ্বাস আবারও মুখ খুলেছেন শাকিবের সঙ্গে নিজের অতীত দাম্পত্য সম্পর্ক, গোপন বিয়ে এবং ধর্ম পাল্টানো নিয়ে চলমান নানা জল্পনা-কল্পনার বিষয়ে।
২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার একটি গোপন লোকেশনে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে সম্পন্ন হয়। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর সেই বিয়ে গোপনই ছিল। এর মধ্যে তারা একাধিক সিনেমায় জুটি বেঁধে পর্দায় ঝড় তুলেছেন, কিন্তু বাস্তব জীবনের এই বন্ধনের খবর থেকে দর্শকরা ছিলেন পুরোপুরি অন্ধকারে।
২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল, সেই রহস্যভেদ ঘটে। দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে নিজের সন্তান আব্রাম খান জয়কে কোলে নিয়ে হাজির হন অপু বিশ্বাস। সেখানেই তিনি প্রথমবার প্রকাশ্যে জানান—জয় হচ্ছে শাকিব খানের সন্তান এবং তাদের বিয়ে হয়েছিল বহু আগেই।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে অপু বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা হয়, সেই গোপন বিয়েতে তিনি কত ভরি গহনা পরেছিলেন? প্রশ্ন শুনে অপু হেসে বলেন, “কত ভরি গহনা পরেছিলাম সেটা বলা কি খুব দরকার? যেহেতু গোপনে বিয়ে করেছিলাম, তাই তেমন কিছু পরে বিয়ের আড়ম্বর ছিল না। খুবই ছিমছামভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “সেই বিয়ের মূল ছিল আমাদের ভালোবাসা। গহনার চাকচিক্য বা বড় আয়োজন নয়, সম্পর্কটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
অপুর এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সামাজিক চর্চার বাইরেও একান্তভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে তারা বিয়েটিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
অপু বিশ্বাস ও শাকিব খানের বিয়ের পরই এক সময় মিডিয়া ও জনমাধ্যমে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে—অপু বিশ্বাস নাকি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা মুখরোচক গুজব ছড়ালেও অপু কখনোই পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। তবে এবার তিনি সরাসরি জানান, “সত্যি বলতে, বিয়ের পরেও আমি আমার নিজের ধর্ম—হিন্দুধর্মেই ছিলাম। ক্যামেরার সামনে অনেক সময় মিথ্যা বলতে হয়েছে ক্যারিয়ারের কারণে।”
তিনি বলেন, “তখন শাকিব আমার স্বামী ছিল, তাকে সাপোর্ট করাটাই আমার দায়িত্ব ছিল। অনেকেই ভাবতো আমি মুসলমান হয়ে গেছি, কারণ আমি একজন মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করেছি। কিন্তু বাস্তবে আমি কখনো ধর্ম পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা করিনি। আমি হিন্দুই ছিলাম এবং এখনও হিন্দুই আছি।”
এই মন্তব্যে অপু পরিষ্কার করেন যে, ধর্ম পরিবর্তনের কোনো আইনি বা ধর্মীয় প্রক্রিয়া তাদের মধ্যে হয়নি, এবং এই ব্যাপারে প্রচলিত গুজবগুলো ভিত্তিহীন।
২০১৭ সালের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির কথা বললে এখনও দর্শকদের মনে হয় বিস্ময়ের রেশ পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে শাকিব-অপুর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গুঞ্জন চলছিল ঠিকই, কিন্তু তারা বিবাহিত—এ কথা কেউ ভাবেনি।
অপু জানান, “যখন আমি সন্তান জয়কে নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসি, তখনই সবার সামনে এই গোপন বিয়ের পর্দা ফাঁস হয়। সেদিনই সবাই জানতে পারেন যে শাকিব খানই আমার সন্তানের বাবা।”
এই লাইভের পর দেশের বিনোদন অঙ্গনে রীতিমতো ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। শুরু হয় সামাজিক আলোচনা, গণমাধ্যমে তুমুল হইচই। ওই ঘটনার কিছুদিন পর থেকেই শাকিব ও অপুর সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ১২ মার্চ আইনি বিচ্ছেদের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে।
আইনি বিচ্ছেদের মাধ্যমে তাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটলেও অপুর সঙ্গে শাকিবের সম্পর্ক এখনো ভদ্র ও সহযোগিতাপূর্ণ বলেই জানান অপু বিশ্বাস। তিনি বলেন, “শাকিব এখনো আমাদের সন্তান জয়কে সব দায়িত্বের সঙ্গে পালন করছে। তার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।”
অপু আরও বলেন, “জয়ই এখন আমার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। আর একজন বাবা হিসেবে শাকিব তার দায়িত্ব থেকে পিছু হটেনি। সেটাই আমার সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।”
এই সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারটি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অপু বিশ্বাসের মুখ থেকে শোনা গোপন বিয়ের পেছনের গল্প, ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার প্রয়াস এবং একজন মায়ের জীবনের লড়াই—সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে একজন নারীর সাহসিকতা, সততা ও সহনশীলতার প্রতিচ্ছবি।
অপু বিশ্বাস তার কর্মজীবনে নতুনভাবে ফেরার চেষ্টা করছেন। টিভি, সিনেমা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন এবং নিজের ক্যারিয়ার ও সন্তানকে ঘিরেই এখন তার ব্যস্ত সময় কাটছে।
শেষ পর্যন্ত, শাকিব-অপুর গোপন বিয়ের গল্প, তার ফলাফল এবং তাদের সন্তানের অস্তিত্ব—সবই এখন জনসম্মুখে স্বীকৃত বাস্তবতা। তবে অপু বিশ্বাসের এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি হয়তো অনেক বিতর্কের অবসান ঘটাবে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য রেখে যাবে একটি খুবই বাস্তব ও সাহসী গল্প।
বাংলাবার্তা/এমএইচ