
ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনী ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য ও সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনী প্রতীকের তালিকায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের বিদ্যমান প্রতীকের তালিকায় আরও ৪৬টি নতুন প্রতীক যুক্ত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করে তা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে।
বর্তমানে ইসির তফসিলে ৬৯টি প্রতীক রয়েছে। প্রস্তাবিত ৪৬টি নতুন প্রতীক যুক্ত হলে মোট প্রতীকের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১৫টি। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা এই তথ্য জানায়।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনের অংশ হিসেবেই এই প্রতীক তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। প্রতীকের তালিকা আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গেজেট আকারে প্রকাশিত হলেই তা কার্যকর হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, একাধিক ধাপে আলোচনা ও যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিকভাবে ১৫০টি প্রতীক প্রস্তাব করা হয়। তবে কমিশন নিজস্ব বিবেচনায় ও বাস্তবতার আলোকে সেই তালিকা সংক্ষিপ্ত করে ১১৫টি প্রতীক চূড়ান্ত করে।
এই চূড়ান্ত তালিকাটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইনি দিক থেকে মন্ত্রণালয় চাইলে কোনো প্রতীক বাতিল বা নতুন কোনো প্রতীক যুক্ত করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করতে পারে।
ইসির ভাষ্য মতে, এই উদ্যোগের মূল কারণ হলো— নতুন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং ভবিষ্যতে নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা বহু রাজনৈতিক দলকে প্রতীক সংকটে না ফেলতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া।
বর্তমানে ইসির নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪১। এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য ইতোমধ্যে ১৪৭টি নতুন রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। সেসব দলের জন্য আগেভাগেই পর্যাপ্ত প্রতীক রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
নতুন তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— বিতর্কিত প্রতীক ‘শাপলা’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইন মন্ত্রণালয়ে যে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তাতে এই প্রতীকটি বাদ রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দল 'শাপলা' প্রতীক চেয়ে আবেদন করলে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম নেয়। নির্বাচন কমিশন সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ‘শাপলা’ প্রতীকটি বাতিল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে এমন কিছু প্রতীক, যেগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হচ্ছে, আবার অনেকগুলো প্রতীক একেবারে নতুন যুক্ত হয়েছে। নিচে প্রস্তাবিত ১১৫টি প্রতীকের পূর্ণ তালিকা তুলে ধরা হলো:
আ: আপেল, আনারস, আম, আলমারি, ঈগল, উটপাখি, উদীয়মান সূর্য, একতারা
ক: কাঁচি, কবুতর, কলম, কলস, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাপ-পিরিচ, কাস্তে, কেটলি, কুমির, কম্পিউটার, কলা, কুড়াল, কুলা, কুঁড়ে ঘর, কোদাল
খ-ঘ: খাট, খেজুর গাছ, গরুর গাড়ি, গাভী, গামছা, গোলাপ ফুল, ঘণ্টা, ঘুড়ি, ঘোড়া
চ-ছ: চাকা, চার্জার লাইট, চাবি, চিংড়ি, চেয়ার, চশমা, ছড়ি, ছাতা
জ-ট: জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, ট্রাক, টেলিফোন, টেলিভিশন
ড-ন: ডাব, ঢেঁকি, তবলা, তরমুজ, তারা, থালা, দাঁড়িপাল্লা, দালান, দেয়াল ঘড়ি, দোয়াত কলম, দোলনা, ধানের শীষ, নোঙ্গর, নৌকা
প-ফ: প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলকপি, ফুলের টব, ফুলের মালা, ফ্রিজ
ব: বক, বাঘ, বই, বটগাছ, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, বাইসাইকেল, বালতি, বেলুন
বৈ-ম: বৈদ্যুতিক পাখা, মই, মগ, মাইক, মটরগাড়ি (কার), মশাল, ময়ূর, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, মোবাইল ফোন, মোড়া, মোরগ
র-ল: রকেট, রিক্সা, লাউ, লিচু, লাঙ্গল
শ-স: শঙ্খ, সোনালী আঁশ, সেলাই মেশিন, সোফা, সিংহ, স্যুটকেস
হ: হরিণ, হাত (পাঞ্জা), হাতঘড়ি, হাতপাখা, হাঁস, হাতি, হাতুড়ি, হারিকেন, হুক্কা, হেলিকপ্টার
নির্বাচনী প্রতীক শুধু প্রতিযোগিতার প্রতীক নয়, এটি একটি দলের রাজনৈতিক পরিচয়, আদর্শ ও সাংস্কৃতিক বার্তার বাহক। প্রতীক সংকটের কারণে অনেক নবগঠিত দল সঠিকভাবে প্রচারে যেতে পারে না বা পরিচিতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।
এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণের জন্যই নির্বাচন কমিশন আগেভাগেই ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী নতুন দলগুলোকে সমান সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে এলে নির্বাচন কমিশন সংশোধিত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে। এরপর এ তালিকা চূড়ান্ত হয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থায় কার্যকর হবে। প্রতীক বরাদ্দের সময় দলগুলোর মধ্যে এ তালিকা থেকেই বাছাই করা হবে প্রতীক।
নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক পরিসরে আরও ভারসাম্য ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে ‘শাপলা’ প্রতীক বাদ যাওয়ায় বিশেষ কিছু দলের আপত্তি থাকলেও কমিশনের যুক্তিকে অনেকে গ্রহণযোগ্য বলছেন।
নির্বাচনী প্রতীকের সংখ্যা বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এটি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ