
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই)। তবে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে: উত্তরপত্রে কোনো ভুল হয়েছে কি না? বিষয়ভিত্তিক নম্বরের সঠিকতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করার সুযোগ।
যেকোনো শিক্ষার্থী চাইলেই নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট বিষয়ের উত্তরপত্র পুনরায় পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারে। তবে মনে রাখা দরকার, ফল পুনঃনিরীক্ষণ বলতে বোঝায় কেবল গণনার ভুল সংশোধন এবং উত্তর বাদ পড়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা—এটি কোনো নতুনভাবে খাতা দেখা নয়।
নিচে এসএসসি ফল পুনঃনিরীক্ষণের সম্পূর্ণ নিয়ম ও প্রক্রিয়া বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
আবেদন গ্রহণের সময়সীমা
ফল প্রকাশের পর পরবর্তী সাত দিন অর্থাৎ ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। সময়সীমার পর আর কোনোভাবেই আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
আবেদন পদ্ধতি: শুধুমাত্র এসএমএসের মাধ্যমে
পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুধুমাত্র টেলিটক (Teletalk) মোবাইল থেকে এসএমএস পাঠিয়ে করা যাবে। এটি অনলাইনে বা অন্য কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে সম্ভব নয়। আবেদন করতে হলে আপনার টেলিটক নম্বর থেকে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন:
প্রথম এসএমএস:
nginx
CopyEdit
RSC <স্পেস> বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড
উদাহরণ:
nginx
CopyEdit
RSC DHA 123456 101
পাঠাতে হবে: 16222 নম্বরে।
এরপর ফিরতি এসএমএসে আবেদন ফি এবং একটি পিন নম্বর জানিয়ে সম্মতি চাওয়া হবে।
দ্বিতীয় এসএমএস (পিন কনফার্মেশন):
objectivec
CopyEdit
RSC <স্পেস> YES <স্পেস> PIN <স্পেস> যোগাযোগের মোবাইল নম্বর
উদাহরণ:
objectivec
CopyEdit
RSC YES 345678 017xxxxxxxx
এটি পাঠালেই আবেদন সম্পন্ন হবে।
আবেদন ফি
প্রতিটি বিষয়ের জন্য ৩০০ টাকা করে ফি নির্ধারিত হয়েছে। তবে দুটি পত্রবিশিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে (যেমন: বাংলা, ইংরেজি) উভয় পত্রের জন্য একত্রে আবেদন করতে হবে এবং ফিও ৩০০ টাকা ধার্য হবে। অর্থাৎ, বাংলা ১ম পত্র ও বাংলা ২য় পত্র আলাদা আলাদা বিষয় হিসেবে গণ্য হবে না।
যতগুলো বিষয় পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করবেন, ততবার আলাদা করে এসএমএস করতে হবে এবং প্রতিটির জন্য ফি কাটা হবে।
বিষয় কোড কোথা থেকে পাবেন?
এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক কোড আপনার প্রবেশপত্রে (Admit Card) দেওয়া থাকে। এছাড়া বোর্ডের ওয়েবসাইট বা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল পোর্টাল থেকেও পাওয়া যাবে।
একজন শিক্ষার্থী একাধিক বিষয়ের জন্য একসঙ্গে আবেদন করতে চাইলে কোডগুলোর মধ্যে কমা (,) দিয়ে আলাদা করে লিখতে হবে। যেমন:
nginx
CopyEdit
RSC DHA 123456 101,107,109
কোন বোর্ডের জন্য কী কোড ব্যবহার করবেন?
বোর্ড | কোড |
---|---|
ঢাকা | DHA |
রাজশাহী | RAJ |
কুমিল্লা | COM |
চট্টগ্রাম | CHI |
যশোর | JES |
বরিশাল | BAR |
সিলেট | SYL |
দিনাজপুর | DIN |
ময়মনসিংহ | MYM |
মাদ্রাসা | MAD |
কারিগরি | TEC |
ফল পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ
আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর ফল পুনঃনিরীক্ষণ শেষ করতে বোর্ড সাধারণত ১৫-৩০ দিন সময় নেয়। এরপর সংশোধিত ফলাফল বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় এবং পরিবর্তন হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে নম্বর পরিবর্তন হতে পারে?
-
যদি উত্তরের কোনো অংশ মূল্যায়ন হয়নি।
-
যদি খাতা চেক করার সময় নম্বরের যোগফলে ভুল হয়।
-
যদি পূর্ণ নম্বর লেখার পর চূড়ান্ত ফলে তা সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হয়।
তবে নম্বর কমেও যেতে পারে। ফলে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করার আগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই ঝুঁকিও মাথায় রাখা উচিত।
শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ
-
আবেদন করার আগে নিশ্চিত হোন যে আপনার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ফল সত্যিই আপনার প্রত্যাশার নিচে।
-
একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করলে খরচও বেশি হবে—তাই কৌশলে নির্বাচন করুন।
-
খাতা পুনরায় দেখা হবে না, কেবল ভুল গণনা ও উত্তর বাদ পড়া দেখার সুযোগ—এটি মনে রাখুন।
-
কোনো কোচিং বা ব্যক্তির মাধ্যমে নয়, নিজের টেলিটক মোবাইল থেকে সরাসরি আবেদন করাই নিরাপদ।
এসএসসি ও সমমানের ফলাফল নিয়ে যারা হতাশ, তারা চাইলে যথাযথ নিয়মে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে পারেন। তবে আবেদনের আগে নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করাই সবচেয়ে জরুরি।
একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে—ফল পুনঃনিরীক্ষণ কোনো নিশ্চয়তা নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের দেওয়া উত্তরের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করার একটি অতিরিক্ত সুযোগ মাত্র। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে আবেদন করলে কোনো বিভ্রান্তি ছাড়াই ফল পুনরায় যাচাই হবে এবং ভুল থাকলে সংশোধনও হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ