
ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া মৌসুমি লঘুচাপ এবং সক্রিয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতিমধ্যেই শুরু হওয়া মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ আগামী দুই দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া বিশ্লেষক এবং কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে তার দেওয়া বিশ্লেষণে তিনি জানান, মার্কিন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের (GFS Model) তথ্য ও বায়ুপ্রবাহ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সাগরে সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপটি এখনও সক্রিয় রয়েছে এবং এটি আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সময়কালে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার—লঘুচাপটির মূল কেন্দ্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ওপরে অবস্থান করবে এবং এর প্রভাবে বাংলাদেশের একাধিক বিভাগে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হবার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ আরও জানান, বর্তমানে উত্তর বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত উত্তাল রয়েছে এবং সেখানে নিয়মিতভাবে গভীর সঞ্চরণশীল মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে। এই মেঘমালা থেকে উৎপন্ন জলীয় বাষ্পবাহী ঘন মেঘের প্রবাহ উপকূল হয়ে বাংলাদেশের ভূভাগে প্রবেশ করছে।
বিশেষত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে এই ঘন মেঘ প্রবেশ করছে এবং এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী আরাকান পাহাড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে এই অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা আরও তীব্র হচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতের মাত্রাও বাড়ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ ঘটতে পারে।
অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, মৌসুমি লঘুচাপের বর্তমান গতিপথ এবং বায়ুপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—এই বৃষ্টিপাত কমপক্ষে শুক্রবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অব্যাহত থাকবে।
তবে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, শনিবার (১৩ জুলাই) থেকে ধীরে ধীরে লঘুচাপের শক্তি কমে আসতে পারে, ফলে বৃষ্টির মাত্রাও কমে আসবে।
কিন্তু এর পরও দেশের উপকূলীয় ও পূর্বাঞ্চলে কিছুটা বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সাগরে ঘন মেঘ সৃষ্টি এবং জলীয় বাষ্পের প্রবাহ অব্যাহত থাকলে বৃষ্টি পুরোপুরি থামতে আরও এক-দুই দিন লাগতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে গভীর সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাথে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদেরও সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে, কারণ প্রবল বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা, নদী ফুলে ওঠা এবং হঠাৎ ঢলের আশঙ্কা রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি এবং কখনো কখনো ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার ফলে এ বৃষ্টিপাত আগামী দুই দিন আরও অব্যাহত থাকতে পারে।
এই বৃষ্টির ফলে ঢাকার নিচু এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর সম্মিলিত প্রভাবে বাংলাদেশে আবারও বৃষ্টিপ্রবণ আবহাওয়ার দেখা মিলছে। কৃষিজমিতে স্বস্তি এলেও পাহাড়ি অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে ভূমিধসের ঝুঁকি এবং শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি বাড়তে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বার্তা অনুযায়ী, ১২ জুলাই পর্যন্ত এই বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে, এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে সতর্ক থাকা, নিরাপদ স্থানে অবস্থান করা এবং সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ