
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী ১৮ জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বিচারকরা ২৫ বছর পূর্ণ করে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করছেন এবং বিধি মোতাবেক তাদের অবসরজনিত সুবিধা প্রদান করা হবে।
অবসরপ্রাপ্ত ১৮ জন বিচারকের মধ্যে রয়েছে ১৫ জন জেলা জজ, ২ জন অতিরিক্ত জেলা জজ এবং ১ জন যুগ্ম জেলা জজ। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে নিযুক্ত এই বিচারকরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ ট্রাইব্যুনাল এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো বিচারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন বিকাশ কুমার সাহা (জেলা ও দায়রা জজ), যিনি আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত ছিলেন। রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জেলা জজ শেখ মফিজুর রহমান, কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মো. মাহবুবার রহমান সরকার, কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের শেখ গোলাম মাহবুব, গাইবান্ধার একই বিভাগের বিচারক মো. মজিবুর রহমান, ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মো. এহসানুল হক, খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের মো. জুয়েল রানা এবং সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মনির কামাল।
পটুয়াখালীর বিশেষ জজ সহিদুল ইসলাম, দিনাজপুরের বিশেষ জজ আল মাহমুদ ফয়জুল কবীর, টাঙ্গাইল জেলা জজ মো. নাজিমুদ্দৌলা, ঠাকুরগাঁওয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক ফজলে এলাহী ভূইয়া, বরিশালের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. রুস্তম আলী, আইন ও বিচার বিভাগের সংযুক্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান, মো. নুরুল ইসলাম, পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম এনামুল করিম এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হোসেনও এই তালিকায় রয়েছেন।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, বিচারকদের চাকরির সর্বোচ্চ মেয়াদ ২৫ বছর, যার পর তাঁরা বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে যেতে বাধ্য হন। এই নিয়মটি সরকারের চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় স্পষ্ট করা আছে। এই বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিচারব্যবস্থায় নিয়মিত নতুন সৃজনশীল নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি এবং অভিজ্ঞ বিচারকদের সুসময়েই অবসর দেওয়া।
বিচার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, এই ১৮ জন বিচারক বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সব সুবিধা ভোগ করবেন। তাদের অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিচারখাতে নিয়মিত পরিবর্তন ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের স্থানান্তর দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। নতুন বিচারকদের সুযোগ করে দেয়া ও অভিজ্ঞদের অবসরে পাঠানো বিচারব্যবস্থার মান উন্নত করতে সহায়তা করে।
বিশ্লেষকরা বলেন, বিচার বিভাগে নিয়মিত নবায়ন বিচার ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত বিচারকদের অবসর গ্রহণ প্রয়োজনীয়। সরকারের এ পদক্ষেপ বিচারব্যবস্থায় নতুন নেতৃত্বের সৃজনশীলতা ও দক্ষতা যোগাবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের কর্মজীবনের অবদান দেশের বিচারব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ছিল, এবং তাদের অবসরজনিত সুবিধাসহ সুস্থ ও সম্মানজনক অবসর নিশ্চিত করার বিষয়েও সরকার সতর্ক রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ