
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর হাতিরঝিলে যুবদল নেতা মো. আরিফ সিকদার হত্যা মামলায় আলোচিত আসামি সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলীকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল ওয়াহাব এ আদেশ দেন। এর মাধ্যমে হত্যা মামলার তদন্তে নতুন গতি আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা।
বুধবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুব্রত বাইনকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, হাতিরঝিল থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম। এ সময় মামলার অগ্রগতির স্বার্থে তার দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তিনি।
আদালতে শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন এবং বলেন, “এই হত্যা মামলায় সুব্রত বাইন অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত পরিকল্পনা, ব্যবহৃত অস্ত্র এবং সহযোগীদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেতে পারে।” অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন জানান এবং রিমান্ড আবেদন বাতিলের অনুরোধ করেন।
দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই মামলায় এর আগে গত ২৩ জুন সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেন। ওই দিন ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এ ছাড়া গত ২৭ মে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযান চালিয়ে কুষ্টিয়ার একটি বাড়ি থেকে সুব্রত বাইন, তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২৮ মে হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে দায়ের করা একটি মামলায় সুব্রত বাইনকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিলের নয়াটোলা মোড়ল গলির ‘দি ঝিল ক্যাফে’র সামনে যুবদল নেতা মো. আরিফ সিকদারকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরিফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ এপ্রিল তিনি মারা যান। নিহত আরিফ সিকদার ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সহ-ক্রীড়া সম্পাদক।
ঘটনার পর নিহতের বোন রিমা আক্তার বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সুব্রত বাইনসহ মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়।
হত্যা মামলায় সুব্রত বাইনের সহযোগী মাহফুজুর রহমান বিপু ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলো— মো. ইয়াছিন (১৯), মো. আসিফ হোসেন (২১), মো. অনিক (১৯), মো. মিরাজ (১৯), মো. আশিক (১৯), মো. ইফতি (২৪), জাফর ইমাম তরফদার মন্টু (৪০), রতন শেখ (৪৫) ও আলিফ (১৯)। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পলাতক থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং সকল আসামিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যার মোটিভ, পরিকল্পনা এবং সংঘবদ্ধ অংশগ্রহণকারীদের চিহ্নিত করতে প্রতিটি তথ্যসূত্র গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, “সুব্রত বাইন এই হত্যা পরিকল্পনায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।”
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল, নাকি ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জেরে ঘটেছে— তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আরিফ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন এবং এলাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী করছিলেন। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা সব দিক বিবেচনায় রেখে তদন্ত চালাচ্ছে।
সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী একসময় অস্ত্র মামলার একাধিক অভিযুক্ত ছিলেন। তাকে নিয়ে বহু সময় ধরেই গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে।
সাত দিনের রিমান্ডে সুব্রত বাইনের জিজ্ঞাসাবাদে যদি হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল রহস্য উদঘাটন হয়, তাহলে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পথ খুলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়—আলোচিত এই যুবদল নেতা হত্যা মামলায় কতদূর পৌঁছায় তদন্ত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ