
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাত্র একদিনে অন্তত ৫২ জনের মরদেহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৬২ জনকে। এই তীব্র সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারানো ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা প্রায় ৫৭ হাজার ৬০০ জনে পৌঁছেছে, আর আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
বুধবার (৮ জুলাই) আনাদোলু বার্তাসংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বহু মরদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
একইসঙ্গে মানবিক সহায়তার সময় গত ২৪ ঘণ্টায় আট জন নিহত এবং ৭৪ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা ৭৬৬ জন এবং আহতের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
গাজায় চলমান এই সংঘর্ষ শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে। বিশেষ করে চলতি বছরের ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় আবারো হামলা চালানো শুরু করে। এর পর থেকে একাধিকবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে তীব্রতা বাড়ছে। গাজায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ১৩ জন নিহত এবং ২৪ হাজার ৮৩৮ জন আহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
গাজায় সংঘর্ষ ও মানুষের উপর নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা দায়ের করেছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আইসিসি গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, “গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার চিত্র ফুটে উঠছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধবিধির কঠোর লঙ্ঘন। দীর্ঘায়িত সংঘর্ষ ফিলিস্তিনি জনসংখ্যাকে অজুহাতে শিকার করে তুলেছে।”
বৈশ্বিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “গাজায় সংঘর্ষ তীব্র হওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট অব্যাহত থাকবে।”
আরব বিশ্বের বিশ্লেষক আমীর আল-হাসানী বলেন, “ইসরায়েল ফিলিস্তিনে সামরিক আক্রমণ চালিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের কঠোর পরিণতি বহন করবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার বিকল্প নেই।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন কর্মকর্তা বলেন, “গাজায় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ওপর হামলা খুবই দুঃখজনক। হাসপাতালে সেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা সংকটকে আরো গভীর করছে।”
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ বাড়ছে। কাতার ও কূটনীতিকরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সংঘর্ষ বন্ধে এখনও কোনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ব্যাপক অবিশ্বাস ও বৈরিতা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘস্থায়ী সমাধান ছাড়া গাজার মতো সংকটপূর্ণ অঞ্চলে মানবিক দুর্ভোগ কমানো সম্ভব নয়। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ ও আন্তঃফিলিস্তিনি সংলাপ অপরিহার্য।
গাজায় নিরীহ মানুষজনের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন অব্যাহত রয়েছে, যা পুরো বিশ্বকে মানবিক ও কূটনৈতিক সংকটের মুখোমুখি করেছে। পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বিশ্ববাসীর সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অপরিহার্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ