
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়, গণহত্যা ও দমনপীড়নের দায় দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের ওপরও বর্তায় এবং সেজন্য দলীয়ভাবে তাদের বিচার হওয়া উচিত। তার ভাষায়, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে যে গণহত্যা, দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে, তাতে শুধু একজন ব্যক্তির দায় নয়, পুরো দলেরই দায় রয়েছে। কাজেই বিচার হওয়া উচিত আওয়ামী লীগেরও।’
বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুসকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “এই যে গণহত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন—সব কিছুই একটা দলীয় নীতির অংশ হিসেবে হয়েছে। শেখ হাসিনা এই নীতির প্রধান রূপকার হলেও, আওয়ামী লীগ সমষ্টিগতভাবে এই বর্বর কর্মকাণ্ডের অংশ। তাই দলীয়ভাবেই তাদের বিচার হওয়া উচিত।”
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে সবচেয়ে বেশি পড়েছে বিএনপি। “বিগত দেড় দশকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মামলা, গ্রেফতার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে দমন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে,” বলেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে একের পর এক হামলা, মামলা ও কারাবরণ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাবন্দি। “গণতান্ত্রিক অধিকার চাওয়া, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অপরাধে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে হতে পারে না,” বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “সবশেষ যেসব গণহত্যা হয়েছে, তার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা নিজেই। সরকারি বাহিনীকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করতে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। এটা কেবল রাজনৈতিক অপরাধ নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ।”
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন ও সংস্কার একে অপরের পরিপূরক। এগুলো কখনো সাংঘর্ষিক নয়। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণ এখন নির্বাচন চায়। তারা ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেতে চায়। সেই চাওয়াকে অবজ্ঞা করে যারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে, তারা আসলে জনগণের সুর থেকে বিচ্যুত। আমরা তাদেরকে বলব—আরও ভেবে দেখুন, কারণ মানুষের চাওয়া উপেক্ষা করে কেউ বেশিদিন টিকতে পারে না।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজ দেশের জনগণের মধ্যে নতুন চেতনা সৃষ্টি হয়েছে। তারা পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন শুধু সরকারের নয়, এটি রাষ্ট্র কাঠামোর, বিচারব্যবস্থার, প্রশাসনের, সব কিছুর। আর সে পরিবর্তনের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই।”
ফখরুল বলেন, “আমরা গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের জন্য আন্দোলন করছি। এটি কোনো দলীয় ইস্যু নয়, এটি গোটা জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন।”
এর আগে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুসের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তার সঙ্গে দলের অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাততালের চিকিৎসকরা জানান, আব্দুল কুদ্দুসের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে এগোচ্ছেন।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপি মহাসচিব আবারও সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তুলে ধরলেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দলীয় বিচারের দাবি উত্থাপন করে রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ