
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত নামগুলোর একটি—সাকিব আল হাসান। এক সময় মাঠে ছিলেন দলের ভরসার প্রতীক, ব্যাটে-বলে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তার। কিন্তু বর্তমানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে। মাঠের বাইরের নানা বিতর্ক, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং নিরাপত্তা শঙ্কা—সব মিলিয়ে দেশের মাটিতে তার অনুপস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, বিদেশের মাটিতে দলের বাইরে থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিস্তর প্রশ্ন।
এই প্রেক্ষাপটে অবশেষে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক এবং মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠু। তার বক্তব্যে একদিকে যেমন ছিল সাকিবের ক্রিকেটীয় দক্ষতার অকপট স্বীকৃতি, অন্যদিকে ছিল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আভাস। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—ক্রিকেটার সাকিবের জন্য বিসিবির দরজা এখনো খোলা। তবে দলে ফেরার আগে তার আরও কিছু পারফরম্যান্স দেখতে চান নির্বাচকরা।
লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা সাকিবের অনুপস্থিতি নিয়ে গুঞ্জন চলছে অনেক দিন ধরেই। তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে গত সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়ার জেরে দেশে তার নিরাপত্তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। তবে ক্রিকেটীয় আলোচনায় বিষয়টি বারবার ছায়ার মতো ফিরে এসেছে।
সাকিবের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে বিসিবি পরিচালক বলেন, “সে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) খেলেছে, বোলিং অ্যাকশন সংশোধন করেছে। এখন আরেকটা–দুইটা টুর্নামেন্ট খেললে, হয়তো নির্বাচকরা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।”
তবে দেশের বাইরের সিরিজেও তাকে দেখা না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় সরাসরি রাজনীতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক বিষয়টা আমাদের বিষয় না। ক্রিকেটার সাকিবের ব্যাপারে আমাদের দরজা খোলা। তবে তার ফিটনেস, পারফরম্যান্স, সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো—সবকিছু দেখেই নির্বাচকরা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ইফতেখার মিঠুর বক্তব্যে বারবার ফুটে উঠেছে যে সাকিব আল হাসানের মতো প্রতিভাকে একেবারে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার সে। এমন ক্রিকেটার ১০০ বছরেও এক-দুইটা পাওয়া যায়। সে শুধু একজন ব্যাটার বা বোলার নয়, একজন পূর্ণাঙ্গ অলরাউন্ডার। তার মতো ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করা বাস্তবসম্মত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “দলের চাহিদা অনুযায়ী পরিস্থিতি তৈরি হলে সাকিবকে আবারও দলে দেখা যেতে পারে। সেই অভাব আমরা বুঝি। সাকিব দলে এলে পুরো দলের চেহারাটাই বদলে যেতে পারে।”
বিসিবি মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যানের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, সাকিবের ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ নয়। তবে সেটি নির্ভর করছে নির্বাচকদের সিদ্ধান্তের ওপর। তাদের পক্ষ থেকেই সাকিবের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, তা বোর্ডে প্রস্তাব আকারে দেওয়া হবে।
“ক্রিকেট অপারেশন্স ডিপার্টমেন্টই সিদ্ধান্ত নেবে। তারাই পরিকল্পনা নিয়ে বোর্ডে আসবে। তখন বোর্ড জানবে নির্বাচকরা কী ভাবছে,”—বলেছেন মিঠু।
তিনি আরও বলেন, “শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল নির্বাচন হয়েছিল আগের পরিকল্পনার ভিত্তিতে। সামনে কী পরিকল্পনা থাকে, সেটা নির্বাচকরাই ভালো জানবেন। ফাহিম ভাই বা লিপু ভাই (নির্বাচকরা) যদি পরিকল্পনায় সাকিবকে রাখেন, তাহলে নিশ্চয়ই বোর্ডও তাকে বাদ দেবে না।”
সাকিব শেষবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন পাকিস্তান সুপার লিগে। সেখানে তিনি খুব একটা উজ্জ্বল ছিলেন না। তবে বোর্ড মনে করছে, তার অভিজ্ঞতা এখনো দলের জন্য অমূল্য হতে পারে। মিঠুর ভাষায়, “পারফরম্যান্স হয়তো আহামরি কিছু ছিল না, কিন্তু অভিজ্ঞতা তো বাতিল করে দেওয়া যায় না। দলের যখন প্রয়োজন হবে, তখন অভিজ্ঞদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।”
সাকিবের সঙ্গে বিসিবির যোগাযোগ আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মিঠু জানান, “ক্রিকেট অপারেশন্সের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা হয়। সাকিবও এর ব্যতিক্রম নয়।”
সবশেষে মিঠুর মন্তব্য ছিল ভবিষ্যতের অপেক্ষা নিয়ে—“আসুন দেখি সামনে কী পরিকল্পনা আসে। নির্বাচকেরা যেভাবে এগোতে চান, বোর্ড সেটি মূল্যায়ন করবে। তবে সাকিবের মতো একজন দুর্দান্ত ক্রিকেটারকে পরিকল্পনার বাইরে রাখা কঠিন।”
সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা এখনো জিইয়ে আছে, তবে তা আর আগের মতো নিশ্চিত নয়। তার ফিরে আসা নির্ভর করছে নির্বাচকদের চিন্তা-ভাবনা, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং দলের প্রয়োজনের ওপর। তবে বিসিবির একজন শীর্ষ পরিচালকের মুখে তার জন্য “দরজা খোলা” বলাটা সাকিবভক্তদের জন্য আশার আলো হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।
জাতীয় দলের বর্তমান পারফরম্যান্স, সিনিয়র খেলোয়াড়দের অভাব এবং বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট সামনে রেখে সাকিবের অভিজ্ঞতা যে এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তা বোর্ডের অনেকেই মানেন। এখন দেখার পালা—নির্বাচকেরা কীভাবে তার ফেরার রোডম্যাপ তৈরি করেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ