
ছবি: সংগৃহীত
জুমার নামাজ ইসলামে এক বিশেষ গুরুত্ববাহী ইবাদত। ফজিলতের দিক থেকে এটি যেমন অনন্য, তেমনি রয়েছে এর আদায়ের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। তবে অনেক সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেখানে কেউ মনে করেন—জামাতে অংশ নিতে হলে দ্রুত নামাজে শরিক হতে হবে, অথচ ওজু করতে গেলে জামাত মিস হয়ে যাবে। এমনি এক পরিস্থিতিতে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন: ‘এমন অবস্থায় কি তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করা যাবে?’
এই প্রশ্নেরই বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেছেন এক মুসল্লি। জুমার সকালে ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকায় গ্রামের মসজিদে পৌঁছতে দেরি হয়। যখন পৌঁছান, তখন মসজিদে ইতোমধ্যে ইমাম সাহেব জুমার খুতবা শেষ করে নামাজ শুরু করেছেন এবং নামাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এমতাবস্থায় ওজু করে আসতে গেলে জামাত মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই তিনি জানতে চেয়েছেন, জুমার জামাত পাওয়ার আশঙ্কায় ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে কি না?
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে—এই প্রশ্নের উত্তর হলো, জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও তায়াম্মুম করা সহিহ হবে না। বরং শরিয়ত অনুযায়ী ওজু করাই বাধ্যতামূলক।
যদি পানির ব্যবস্থা থাকে, এবং তা ব্যবহার করতে কোনো বৈধ প্রতিবন্ধকতা না থাকে, তাহলে ওজু না করে তায়াম্মুম করার সুযোগ শরিয়ত দেয় না। এমনকি জামাত ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও নয়। তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ঘটনার মতো পরিস্থিতিতে ওজু করে আসতে গিয়ে যদি জামাত মিস হয়ে যায়, তাহলে একাকী জুমার নামাজ আদায় না করে চার রাকাত জোহরের ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ জুমার নামাজ শুধুমাত্র জামাতের সঙ্গেই আদায়যোগ্য।
ইসলামী ফিকহবিদদের অভিমত অনুসারে, ওজুর প্রয়োজন হলে তায়াম্মুম করা তখনই বৈধ হয়, যখন পানির ব্যবস্থা একেবারে না থাকে, কিংবা পানি ব্যবহার করলে শরীরের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে—যেমন রুগ্নতা, চরম ঠান্ডা বা পানি না পাওয়ার বাস্তব সংকট। কিন্তু শুধু জামাতে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে, অথচ পানি ও ওজুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করা শরিয়ত অনুযায়ী অনুমোদিত নয়।
তবে কিছু ব্যতিক্রমী ইবাদতের ক্ষেত্রে এই বিধান ভিন্ন। যেমন—জানাজা ও ঈদের নামাজ। এ দুই নামাজের জন্য জামাত মিস হয়ে গেলে তা পুনরায় আদায় করা যায় না। তাই যদি নিশ্চিত হয় যে, ওজু করতে গেলে জানাজা বা ঈদের জামাত মিস হয়ে যাবে, তবে তায়াম্মুম করে তা আদায় করা জায়েজ আছে। এই বিধান এসেছে হাদিস ও ফিকহগ্রন্থগুলোর নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগুলোর মাধ্যমে।
ইসলামে দৈহিক পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামাজের পূর্বশর্ত হিসেবে পবিত্রতা রক্ষা করা ফরজ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন— “তোমরা যদি অপবিত্র থাকো, তবে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করো।” (সূরা আল-মায়িদা: আয়াত ৬)
এ থেকে বোঝা যায়, নামাজের আগে পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা অর্জন করা অপরিহার্য। এটি অর্জনের মাধ্যম হলো ওজু বা গোসল। কেউ যদি গোসল করে নেয়, তাহলে নতুন করে ওজু করার প্রয়োজন হয় না—এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) গোসলের পর নতুন করে ওজু করতেন না।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন— “আল্লাহর রাসুল (সা.) গোসলের পর পুনরায় ওজু করতেন না।” —(সুনানে নাসায়ি)
অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে— “রাসুল (সা.) গোসলের আগে ওজু করতেন। কিন্তু গোসলের পরে ওজু করতেন না।” —(তিরমিজি, নাসায়ি)
ইসলামী ফিকহগ্রন্থসমূহে (যেমন: আল-মাবসুত, বাদায়েউস সানায়ে, কিতাবুল আসল, হাশিয়াতুত তাহতাবী) থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, পানির উপস্থিতিতে শুধুমাত্র সময় সাশ্রয়ের জন্য তায়াম্মুম করার অনুমোদন শরিয়ত দেয় না।
জুমার জামাত পাওয়ার জন্য যদি কেউ ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করে থাকেন, তাহলে তার সেই নামাজ শরিয়ত মোতাবেক আদায় হয়নি। সেক্ষেত্রে ওজু করে এসে যদি জামাতে শরিক হতে না পারেন, তবে চার রাকাত জোহরের ফরজ নামাজ আদায় করাই হবে ইসলামী বিধান অনুযায়ী সঠিক করণীয়।
তাই কোনো পরিস্থিতিতে যেন ভুল ফতোয়ার শিকার না হই, সে বিষয়ে সকল মুসল্লিকে সচেতন থাকতে হবে। ইসলাম সহজ ধর্ম, তবে এর বিধান মানার ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়াটাই মু’মিনের কর্তব্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ