
ছবি: সংগৃহীত
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নানা ধরনের অপরাধ, সহিংসতা এবং নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে সরকার দেশজুড়ে ‘চিরুনি অভিযান’ পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নেই। আজ (১৩ জুলাই) থেকেই সারা দেশে চিরুনি অভিযান শুরু হচ্ছে। আমরা গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে পরিকল্পিত ও নির্ভুল অভিযান পরিচালনা করব।”
এই চিরুনি অভিযানে টার্গেট থাকবে—খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মব সহিংসতা, মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিতভাবে অপরাধ দমনমূলক অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কিছু এলাকায় নতুন করে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এবং সংগঠিত অপরাধচক্র ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই এখন সময় এসেছে আরও ব্যাপক ও গভীরতর অভিযানে নামার।”
তিনি জানান, এই চিরুনি অভিযানে মাঠে থাকবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সিআইডি, এনএসআই এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত টিম। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চল, শিল্পাঞ্চল, ঘনবসতিপূর্ণ নগর অঞ্চল এবং অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ নজরদারি ও তল্লাশি অভিযান চালানো হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “চিরুনি অভিযানের অর্থ হচ্ছে—একটি নির্দিষ্ট এলাকা পুরোপুরি ঘিরে ফেলে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো, সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা এবং অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও নিষিদ্ধ উপাদান উদ্ধার করা। আমরা কাউকে হয়রানি করব না, কিন্তু অপরাধীদের কোনো ছাড়ও দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী যেকোনো কার্যক্রম সরকার কঠোর হাতে দমন করবে। এজন্য শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা। সাধারণ মানুষ যদি তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন, তাহলে অপরাধীরা বেশি দিন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারবে না।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি রোধ, রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবিলা, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “মাদক এখন সবচেয়ে বড় সামাজিক অভিশাপ। এই ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।”
চিরুনি অভিযান কত দিন চলবে—এই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “এটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়। যতদিন প্রয়োজন, ততদিন চলবে। আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চমাত্রায় সক্রিয় হয়েছে, তাতে অপরাধ চক্রের ভেতরে বড়সড় ভাঙন দেখা দিতে পারে। তবে তারা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের অভিযান মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে, নির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে পরিচালনা করাই হওয়া উচিত সরকারের মূল লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দেশজুড়ে চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে জঙ্গি আস্তানা থেকে শুরু করে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বড় বড় চালান উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। এবার পরিস্থিতি আরও জটিল ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় অভিযানে প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারি ও ডেটা অ্যানালাইসিস ইউনিটও সম্পৃক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ