
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম ও প্রতীক বরাদ্দের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি নতুন কিছু প্রতীক অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি কিছু প্রতীক বাদ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে জনপ্রিয় ও পরিচিত প্রতীক ‘শাপলা’। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে বিরোধিতা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন একাধিক নতুন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে 'শাপলা' বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বুধবার (৯ জুলাই) রাতে এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দলের পক্ষ থেকে নিবন্ধনের আবেদনপত্রে আমরা ‘শাপলা’ প্রতীককে প্রাধান্য দিয়েছি। ইসির এমন সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে অনাবশ্যক বাধা তৈরি করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট এবং এটি সুষ্ঠু ও সমান সুযোগের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। কমিশন কী যুক্তিতে একটি জনপ্রিয় ও জাতিসত্তার প্রতীক ‘শাপলা’ বাদ দিয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। শুধু বলার জন্য কিছু ব্যাখ্যা দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না। জনগণের কাছাকাছি যেসব প্রতীক, সেগুলোকে বাদ দিয়ে অবিচার করা হচ্ছে।”
এর আগে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘শাপলা’কে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলভুক্ত প্রতীকের তালিকায় না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তিনি বলেন, “এই প্রতীকটি এখন থেকে আর কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী ব্যবহার করতে পারবে না। সিদ্ধান্তটি কমিশনের অভ্যন্তরীণ আলোচনার পর নেয়া হয়েছে।”
এই ঘোষণার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ পায়। দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বুধবার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্টে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, “শাপলা যদি রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে বাতিল হয়, তাহলে ধানের শীষও গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়। প্রতীক নির্বাচন কোনো পক্ষপাতদুষ্ট কিংবা অতীত ইতিহাস নির্ভর হওয়া উচিত নয়। সমতার ভিত্তিতে প্রতীক নির্বাচন ও বরাদ্দ করতে হবে।”
তিনি আরও লিখেন, “নতুন রাজনৈতিক দলগুলো যখন গণতন্ত্রের শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, তখন তাদের প্রতীক বাছাইয়ের সুযোগ সংকুচিত করে দেয়া মানে গণতান্ত্রিক চর্চায় বাধা সৃষ্টি করা।”
প্রসঙ্গত, ‘শাপলা’ প্রতীকটি পেতে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও নাগরিক ঐক্য সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। তবে কোনো দলকেই এই প্রতীক দেয়া হচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
এনসিপি তাদের নিবন্ধনের আবেদনে দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা ছাড়াও আরও দুটি প্রতীক প্রস্তাব করে, যেগুলো হলো ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’। তবে তাদের মূল পছন্দ ছিল শাপলা, যা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবেও পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি প্রতীক।
ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কমিশন ইতোমধ্যে প্রতীক তালিকা হালনাগাদের কাজ করছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৬৯টি প্রতীক বাড়িয়ে অন্তত ১১৫টি প্রতীক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তবে সেই সম্প্রসারিত তালিকায় ‘শাপলা’ থাকছে না বলে জানানো হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদ এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মহলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসিকে অবশ্যই প্রতীক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নতুন রাজনৈতিক শক্তিগুলো আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারে এবং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উৎসাহ পায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ