
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আজকের তরুণ প্রজন্ম আর কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা কিংবা নির্বাচনী ভাগ-বাটোয়ারার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা চায় একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে না দুর্নীতির মাফিয়া-সিন্ডিকেট, থাকবে না ক্ষমতার দখলদারি আর জনগণকে বাইরে রেখে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। তরুণেরা এখন রাষ্ট্র সংস্কার ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থার বাস্তবায়নে প্রত্যয়ী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাতে বাগেরহাট রেল রোড এলাকায় আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এই সমাবেশ ছিল ‘দেশ গড়তে জুলাই’ কর্মসূচির আওতায় আয়োজিত ১২তম দিনের পদযাত্রার অংশ।
তিনি বলেন, "আমরা কোনো দল কিংবা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নই। আমরা মুখ খুলেছি সেই পুরোনো বন্দোবস্ত ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে, যেখানে মাফিয়া, চাঁদাবাজ এবং লুটপাটকারীরা রাজনীতিকে কব্জা করে রেখেছে। এই ব্যবস্থায় জনগণের অধিকার নেই, স্বচ্ছতা নেই, বিচার নেই। আমরা সে কারণেই জনগণের পক্ষ থেকে রাজপথে নেমেছি। যারা এখনো মনে করছেন এই লুটেরা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব, তাদের উদ্দেশে বলছি—সময় শেষ। দেশের মানুষ আর এই চক্রকে মেনে নেবে না।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের রাজপথে ফের সক্রিয় হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "আপনারা কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখছেন না? ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা পরিবর্তন চায়। তারা আর কোনো আপসের রাজনীতিতে অংশ নেবে না। এই তরুণরাই নতুন বাংলাদেশের চালিকাশক্তি হবে।"
গণজাগরণ ও রাষ্ট্র সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এনসিপির অতীত ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, "আমরা একবার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়েছিলাম। তবে সেটা পুরোপুরি সফল হয়নি। আজ আবার আমরা এসেছি। এবার ব্যর্থ হব না। শহীদদের রক্তের সঙ্গে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতেই হবে, এই জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যেই।"
নাহিদ ইসলাম পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে কঠোর বার্তাও দেন। বলেন, "পুলিশ ও প্রশাসনকে বুঝতে হবে, তারা জনগণের করের টাকায় চলে। তাদের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কোনো দল বা গোষ্ঠীর দলবাজিতে লিপ্ত থাকা নয়। আমরা ইতিহাস থেকে দেখেছি, ফ্যাসিবাদী যুগে যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের পরিণতি ভয়াবহ ছিল। প্রশাসনকে এখনই সঠিক অবস্থান নিতে হবে—চাঁদাবাজ, মাফিয়া আর লুটেরাদের বিরুদ্ধে।"
এই বিশাল জনসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্য সচিব শেখ আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আবিদ এবং বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী সৈয়দ মোরশেদ আনোয়ার।
জনসভায় বক্তব্য রাখেন আরও অনেকে—দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব সামান্তা শারমিন, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাহমুদা মিতু, মোল্যা রহমাতুল্লাহ, তাজনুভা জাবিন, অ্যাডভোকেট আল আমিন এবং জান্নাতুল বাকি।
এর আগে দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ পরিবারের সদস্য ও আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিকালে রামপাল উপজেলার ফয়লা বাজারে অনুষ্ঠিত পথসভায় অংশ নেন তাঁরা।
দিবসের শেষভাগে এনসিপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ পরিদর্শন করেন। পরে সন্ধ্যায় মিছিলের মাধ্যমে বাগেরহাট থেকে রওনা দিয়ে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন নেতারা।
‘দেশ গড়তে জুলাই’ নামের এই কর্মসূচির আওতায় এনসিপি দেশব্যাপী সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁরা বলছেন, এই প্রজন্মই একমাত্র পারে বাংলাদেশকে পুরোনো চক্রের হাত থেকে মুক্ত করে একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ