
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় করে ইতিহাস গড়েছে। এই অর্জনকে কেবল একটি ক্রীড়াবিজয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস এই বিজয় উৎসর্গ করেছেন দেশের গৌরবময় ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়—জুলাই মাসের শহীদদের উদ্দেশে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং এর ধারাবাহিকতায় ঘটে যাওয়া ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনার শহীদদের স্মরণে এ উৎসর্গ—বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক মানবিক আবেগের প্রতিফলন।
তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সিরিজ নিজেদের করে নেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও শক্তিশালী দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদেরই মাঠে দাঁড়িয়ে এই জয় নিঃসন্দেহে এক অনন্য অর্জন।
সিরিজ জয়ের পর অধিনায়ক লিটন কুমার দাস বলেন, “এই জয় আমরা উৎসর্গ করছি সেইসব শহীদদের প্রতি, যাঁরা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। ৭ নভেম্বরের শহীদ দিবসের প্রেক্ষাপট আমাদের ইতিহাসের এক গর্বিত অধ্যায়। আমরা চাই, আমাদের এই পারফরম্যান্স তাঁদের প্রতি সম্মান জানাক।”
সিরিজ জয়ের পুরো কৃতিত্বটাই দলের সকল সদস্যকে দিয়েছেন লিটন। তার ভাষায়, “এই সিরিজে আমাদের দল যেভাবে খেলেছে, আমি গর্বিত। প্রত্যেকেই দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে। আমরা সবাই জানতাম আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং দল হিসেবে একসঙ্গে খেলতে হবে। আজকের জয় সেই দলীয় ঐক্যের ফল।”
গত কয়েকটি সিরিজে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। অনেকেই এই ফরম্যাটে দলের মানসিক দৃঢ়তা ও খেলোয়াড় নির্বাচনের ওপর প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মাটিতে এমন এক প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বাংলাদেশ যেন প্রমাণ করলো—তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত।
সিরিজের শেষ ম্যাচে মেহেদি হাসান মিরাজের পরিবর্তে শেখ মেহেদিকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তও ছিল যথেষ্ট আলোচিত। এ প্রসঙ্গে লিটন বলেন, “আমার মনে হয়েছিল এই উইকেটে শেখ মেহেদিই বেশি কার্যকর হবে। সে যেমন পারফর্ম করেছে, তাতে আমার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ হয়েছে। মিরাজও দারুণ খেলোয়াড়, তবে কন্ডিশনের জন্য আমি মেহেদিকে এগিয়ে রেখেছিলাম।”
এছাড়া বোলিং ইউনিটের প্রশংসা করে লিটন বলেন, “আমাদের বোলিং আক্রমণ এখন অনেক শক্তিশালী। আজ যদি টস জিততাম, তাহলে প্রথমে ব্যাট করতাম। কারণ আমি জানতাম, আমাদের বোলাররা এই পিচে ম্যাচ ধরে রাখতে পারবে।”
এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে যে আগ্রহ, তা আরও বেগবান হবে বলে আশা করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। লিটনও বলেন, “এই জয় আমাদের শুধু আত্মবিশ্বাসই দিচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতে বড় বড় টার্গেট ছোঁয়ার জন্য প্রস্তুত করছে।”
তিনি যোগ করেন, “আমাদের স্বপ্ন আরও বড়। আমরা চাই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ নিয়মিত সফল দল হিসেবে পরিচিত হোক। এই সিরিজ জয় আমাদের সেই পথেই এগিয়ে দেবে।”
এই জয় কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি বার্তা—বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মানসিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা এবং ঐক্যের মাধ্যমে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই অর্জন উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে ক্রিকেটাররা প্রমাণ করেছেন, জাতীয় গৌরব শুধু খেলার মাঠেই নয়—তা ইতিহাস ও আত্মত্যাগের সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ