
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটার হিসেবে তিনি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এবং আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তবে গত দুই বছর ধরে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে খেলোয়াড়ি পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক ও বিতর্কিত প্রেক্ষাপটে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা জটিলতায় জড়িয়েছেন তিনি। বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকার ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও দলীয় নেতাদের পালিয়ে বেড়ানোর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতে নতুন করে আলোচনায় আসেন সাকিব।
একটি হত্যা মামলায় নাম আসার পর থেকেই সাকিব আল হাসান দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে। মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না—সেটি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া না গেলেও, দেশের প্রধান ক্রিকেট তারকার এভাবে নির্বাসিত জীবন কাটানো দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য অস্বস্তিকর এক বাস্তবতা।
এই পরিস্থিতিতে জাতীয় দলে সাকিবের ফেরা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এসব জল্পনার অনেকটাই খণ্ডন করেছেন। তিনি বলেন, “সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে আমি অফিসিয়ালি কিছু জানি না। সাধারণত এমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলে বোর্ডে আলোচনা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনো আলোচনার কথা আমি শুনিনি। তাই এ মুহূর্তে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলার সুযোগ নেই।”
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
সাকিবকে ঘিরে নানা রকম গুজব ও জনমত ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ বলছেন, তিনি রাজনীতির কারণে দলে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়াই ছিল তার বড় ভুল। এসব প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি বলেন, “এই আলোচনা গত দুই বছর ধরেই চলছে। তবে বোর্ড ক্রিকেট সংক্রান্ত বিষয়েই মূলত কাজ করে। বাইরের আলোচনা নিয়ে বোর্ডে আমরা তেমন কিছু করছি না। এই ধরনের তথ্য গুজব কি না, আমি বলতে পারব না। কিন্তু আমি তো বোর্ডের সভাপতি—সে হিসেবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, এমন কোনো আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “সাকিব আমাদের জাতীয় সম্পদ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার জাতীয় দলে ফেরা হলে সেটা অবশ্যই নির্বাচক কমিটি, ক্রিকেট অপারেশনস ও টিম ম্যানেজমেন্টের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে হতে হবে।”
বিসিবি সভাপতি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, বর্তমান বোর্ড পরিচালনায় তিনি নির্বাচন, দল গঠন ও ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ব্যক্তিদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার সময় আমি চেষ্টা করছি যেন ক্রিকেট সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলো পুরোপুরি পেশাদারভাবে নেওয়া হয়। নির্বাচক প্যানেল ও টিম ম্যানেজমেন্ট স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তারা সাকিবের বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে, সেটাও তারা নিজেরাই ঠিক করবে।”
এর আগে শনিবার (১২ জুলাই) বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু বলেন, “বাংলাদেশের গ্রেটেস্ট ক্রিকেটার হচ্ছেন সাকিব আল হাসান। তার তুলনায় কোনো সেকেন্ড চয়েস নেই। তার জন্য জাতীয় দলের দরজা সবসময় খোলা।”
তিনি আরও বলেন, “আগে বোর্ড কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, সেটা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু এখন বোর্ড সভাপতি দায়িত্ব দিয়েছেন ক্রিকেট অপারেশনস ও নির্বাচক প্যানেলকে। তারাও নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখছেন। সাকিবের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা তারা বিবেচনা করবে।”
গত বছরের আগস্টে ভারতের বিপক্ষে খেলার পর থেকেই সাকিবকে জাতীয় দলে দেখা যায়নি। ২০২3 সালের একদিনের বিশ্বকাপের পরপরই তিনি ইনজুরি ও পরে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বিশ্রামে যান। এরপর রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মাগুরা থেকে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু এরপরই তার বিরুদ্ধে মামলার খবরে পরিস্থিতি মোড় নেয় ভিন্ন দিকে।
জাতীয় দলে তার অনুপস্থিতি শুধু মিডল অর্ডারে নয়, স্পিন আক্রমণ ও নেতৃত্বগুণেও বড় শূন্যতা তৈরি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দল একধরনের নতুন প্রজন্মে রূপান্তরিত হলেও, অভিজ্ঞতার অভাব অনেক ক্ষেত্রে দলের পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে ফেরা আপাতত নির্ভর করছে একাধিক বিষয়ের ওপর—প্রথমত, তার দেশে ফেরার সাহস ও প্রস্তুতি; দ্বিতীয়ত, মামলার আইনি অগ্রগতি; তৃতীয়ত, নির্বাচক কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট আইকনের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের সিরিজ ও অক্টোবরের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগস্টের মধ্যে দল গঠন নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু হবে। সে সময় সাকিব প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত বোর্ডের অবস্থান স্পষ্ট—সাকিব ইস্যুতে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি হয়তো হতাশাজনক, তবে একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষারও ইঙ্গিত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ