
ছবি: সংগৃহীত
পুরুষ অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকির রুদ্ধশ্বাস এক সেমিফাইনাল ম্যাচে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষ জাপানের বিপক্ষে হেরে গেল বাংলাদেশ কিশোর দল। চীনের ডাজুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে তিনবার এগিয়ে গিয়েও ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে ফাইনালের টিকিট হাতছাড়া করে তারা। রুদ্ধশ্বাস লড়াই, টানটান উত্তেজনা আর দারুণ সব গোলের ম্যাচ শেষে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের হকি কিশোররা।
প্রথম কোয়ার্টারে যেভাবে শুরু করেছিল বাংলাদেশ, তাতে ফাইনালের স্বপ্ন একরকম বাস্তব মনে হচ্ছিল। খেলার মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন দ্বীন ইসলাম। প্রতিপক্ষকে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই ১২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইসমাইল হোসেন। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথম কোয়ার্টার শেষ করে লাল-সবুজের যুবারা।
তবে দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকেই ফিরে আসে জাপান। ধীরে ধীরে ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে তারা। আর তার ফল মেলে দ্রুতই। একে একে দুই গোল শোধ করে সমতা ফেরায় দলটি। ম্যাচে হঠাৎ করে চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। তবে ৩০তম মিনিটে অধিনায়ক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর অনবদ্য এক আক্রমণ থেকে গোল করে আবারও লিড এনে দেন তিনি। ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে যায়।
তৃতীয় কোয়ার্টারে দুই দলই বেশ রক্ষণাত্মক খেললেও গোলের দেখা পায়নি কেউ। দুই দলের রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষকদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে গোলশূন্য থেকে যায় এই কোয়ার্টার। তবে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে দাঁড়ায় শেষ চতুর্থ কোয়ার্টারটি।
৪৬ মিনিটে জাপান সমতা ফেরায় ৩-৩ গোলে। বাংলাদেশের হতাশ ভক্তদের মুখে হাসি ফোটে এক মিনিট পরই, যখন ৪৭তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে দলকে ফের এগিয়ে দেন অমিত হাসান। ৪-৩ গোলে এগিয়ে থেকে আবারও ফাইনালের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়েনি কিশোর হকি দলের।
খেলার বাকি ৯ মিনিটে রীতিমতো ঝড় তোলে জাপান। অসাধারণ গতি, মুভমেন্ট ও স্কিলের মাধ্যমে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ভেদ করে টানা তিনটি গোল আদায় করে নেয় তারা। বাংলাদেশ কোনো জবাব দিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ৬-৪ ব্যবধানে জিতে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে জাপান।
ম্যাচ শেষে হতাশা ঝরেছে কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়দের চোখে-মুখে। তিনবার লিড নেওয়া অবস্থান থেকেও হার মেনে নেওয়া সহজ নয়। তবে হকি বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এবং আক্রমণাত্মক মানসিকতা অনেক আশার আলো দেখিয়েছে। অভিজ্ঞতা ও ফিনিশিংয়ের ঘাটতি না থাকলে হয়তো ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।
এই হার সত্ত্বেও বাংলাদেশ দল এখনো পদকের লড়াইয়ে রয়েছে। আগামী ১৩ জুলাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে শক্তিশালী মালয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তারা। মালয়েশিয়া তাদের সেমিফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে শুটআউটে ৩(৩)-৩(৪) ব্যবধানে হেরে গেছে।
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জয় পেতে হলে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে আরও সংগঠিত হতে হবে এবং লিড নেওয়ার পর সেটি ধরে রাখার কৌশল রপ্ত করতে হবে। কারণ জাপানের বিপক্ষে তিনবার লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত হারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিলে, পদক স্বপ্নও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
যদিও শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, তবে অনূর্ধ্ব-১৮ দল যে সম্ভাবনার বার্তা দিয়েছে, তা ভবিষ্যতের হকি দল তৈরিতে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে বলেই মনে করছেন হকি সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ