
ছবি: সংগৃহীত
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে আজ শনিবার দেশের সকল কাস্টম হাউজ পূর্ণাঙ্গভাবে খোলা থাকবে। এর আগে গতকাল শুক্রবারও খোলা ছিল দেশের সকল কাস্টম হাউজ। এই দুই দিনে দেশের আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, ঢাকা, বেনাপোল, আইসিডি, মোংলা ও পানগাঁও কাস্টম হাউজগুলোতে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্কনীতি শাখা থেকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে আমদানি-রপ্তানির তথ্য সংগ্রহ ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ‘পণ্য চালান ছাড়’ প্রক্রিয়ায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্য চলাচল সচল রাখতে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাস্টম হাউজ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পেছনে রয়েছে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট। চলতি বছরে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আদায়ে বিঘ্ন ঘটেছিল, যার ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে জুন মাসে দুইটি শনিবারের দিনও কাস্টম হাউজ খোলা রাখার নির্দেশনা জারি হয়েছিল, যাতে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম ব্যাহত না হয়।
তবে পরবর্তীতে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আবারও কর্মচারীরা আন্দোলনে ফিরে গেলে একটি শনিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা পূর্ণাঙ্গ বন্ধ ঘোষণা করা হয়, যা বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে আর্থিক ও সময়গত ক্ষতির সম্মুখীন করেছিল। এই ধরনের সমস্যা এড়াতে চলতি সপ্তাহে পুনরায় ছুটির দিনেও কাস্টম হাউজ খোলা রাখার নির্দেশ জারি করা হলো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে দেশের সব ব্যবসায়ী সংগঠন, সরকারি সংস্থা এবং আমদানি-রপ্তানি বিষয়ক সমিতিগুলোকে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। এর ফলে তারা তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা করতে সক্ষম হবেন।
ব্যবসায়ীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই পদক্ষেপের ফলে বাণিজ্যের অব্যাহততা নিশ্চিত হবে ও সরবরাহ চেইন সচল থাকবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃহত্তর অংশ বিশেষ করে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নিয়মিত এবং সুষ্ঠু প্রবাহ বজায় রাখা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। তাই ছুটির দিনেও কাস্টম হাউজ খোলা রাখার এই পদক্ষেপ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
অন্যদিকে, নিয়মিত ব্যবস্থাপনার অভাবে যেমন এই ধীরগতি দেখা দিয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে এনবিআরকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে, তারা প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের কার্যক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক দপ্তরগুলোতে সেবা প্রদান আরও গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, বাণিজ্যের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে তারা সকল প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু রাখার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
সূত্র: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শুল্কনীতি শাখা, কাস্টম হাউজ।
বাংলাবার্তা/এসজে