
ছবি: সংগৃহীত
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও সূচকের ধারাবাহিক উত্থানের মধ্য দিয়ে চলতি সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাণচাঞ্চল্যের নতুন ধারা পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচক, বাজার মূলধন এবং লেনদেনের পরিমাণ—তিন দিক থেকেই শক্তিশালী অগ্রগতি দেখা গেছে। সপ্তাহজুড়ে এ ধারা অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সপ্তাহ শেষে প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬ কোটি টাকার তুলনায় ১০ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা বেশি। শতাংশের হিসাবে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১.৬১ শতাংশ। বাজার সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নির্দিষ্ট কিছু খাতে টানা শেয়ারমূল্য বৃদ্ধিই এই উন্নতির প্রধান কারণ।
ডিএসইতে চলতি সপ্তাহে সবকটি মূল্যসূচকই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। সবচেয়ে বড় উত্থান হয়েছে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স-এ, যা সপ্তাহ শেষে ১৭৩.৯৭ পয়েন্ট বা ৩.৫৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায়। একইভাবে ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৭২.৫০ পয়েন্ট বা ৩.৯৫ শতাংশ, এবং ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৩৫.৫৭ পয়েন্ট বা ৩.৩৪ শতাংশ।
এই সূচক বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে নতুন করে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক ব্রোকারেজ হাউজ ও বিশ্লেষক। বিভিন্ন খাতভিত্তিক কোম্পানির শেয়ারে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদাই সূচকের এই উন্নয়নের পেছনে প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
ডিএসইতে চলতি সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার তুলনায় ৬০০ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেশি। গড়ে প্রতিদিনের লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৬৩৬ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের গড় ৪৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার চেয়ে ১৫০ কোটি ৭ লাখ টাকা বেশি—শতাংশ হিসেবে যার বৃদ্ধি ৩০.৮৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক, প্রকৌশল, ঔষধ, এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহই এই লেনদেন বৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, যা স্পষ্টভাবে বাজারের ইতিবাচক ধারার ইঙ্গিত দেয়। কমেছে মাত্র ৩৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম এবং ৩৫টির দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাজার পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা ফিরে আসবে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
শুধু ডিএসই নয়, দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) তেও চলতি সপ্তাহে সূচক ও কোম্পানি পারফরম্যান্সের দিক থেকে বেশ উন্নতির চিত্র দেখা গেছে।
সিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০৭৮.১৯ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩.৩০ শতাংশ বেশি। সিএসসিএক্স সূচক বেড়েছে ৩.১৯ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে ৮৫৯৮.৪৯ পয়েন্টে। অন্যান্য সূচকের মধ্যেও সিএসই-৫০ সূচক বেড়েছে ৩.০৫ শতাংশ, সিএসই-৩০ বেড়েছে ৩.৪৪ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক বেড়েছে ২.৭১ শতাংশ, যা এখন ৮৯৬.২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
তবে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, সিএসইতে চলতি সপ্তাহে লেনদেন কিছুটা কমেছে। মোট লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার তুলনায় ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা কম। এ নিয়ে বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত, সিএসইর তুলনায় ডিএসইতে বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয় রয়েছেন।
সিএসইতে ৩২০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৪২টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৫৮টির কমেছে, আর ২০টির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ডিএসইর মতো এখানেও বড় অংশ কোম্পানি শেয়ার দামে উত্থান দেখা গেছে।
সপ্তাহজুড়ে সূচক, বাজার মূলধন এবং লেনদেনের পরিমাণের এমন ইতিবাচক প্রবণতা দেশের পুঁজিবাজারের জন্য ভালো বার্তা বয়ে এনেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা দীর্ঘস্থায়ী হলে পুঁজিবাজারে আরও বিনিয়োগ আসবে এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়বে। তবে বাজারকে স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব রাখতে হলে এখনই প্রয়োজন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ