
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের কয়েকটি বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বিভাগের বিভিন্ন স্থানে আজ সোমবার (১৪ জুলাই) দিনভর হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। তবে আশার কথা হলো, দেশের সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই, ফলে এ বিষয়ে কোনো সতর্কতা বা সংকেত জারি করা হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে এবং কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
সোমবার সকালে সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমি গড়ের তুলনায় কিছুটা কম। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯২ শতাংশ, যা বৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, দিনের তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে আসতে পারে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় বৃষ্টি হবে সেখানে।
গতকাল রবিবার রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২ দশমিক ২ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে দেশের ছয়টি বিভাগ—ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট—এর অনেক স্থানে এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। এসব এলাকায় নিম্নচাপজনিত কারণে মেঘ জমে আছে, ফলে যেকোনো সময় হঠাৎ ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
তবে এই বৃষ্টি সারা দিন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বর্ষণ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এটি মূলত থেমে থেমে হবে।’’
পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ দিনের তাপমাত্রা সারাদেশেই ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মাঝারি বা ভারী বৃষ্টিপাত হবে, সেখানে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় স্বস্তি আসতে পারে ভ্যাপসা গরমে কষ্ট পাওয়া মানুষদের মধ্যে।
রাতের তাপমাত্রাও কিছুটা কমতে পারে, যা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও হালকা দমকা হাওয়া থাকায় কিছু এলাকায় অস্বস্তি রয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতেও কোনো ধরনের সতর্কতা বা সংকেত জারি করা হয়নি।
এটি বন্দর ব্যবহারকারী জেলেরা এবং সমুদ্রগামী নৌযানের জন্য স্বস্তির খবর। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে পণ্য পরিবহন ও জেলেদের মাছ ধরার কাজ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মৌসুমি বায়ু বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মাঝারি থেকে সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষাকাল হিসেবে এটি স্বাভাবিক আচরণ। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে এই ধরনের থেমে থেমে মাঝারি বর্ষণ বরাবরই হয়ে থাকে।
তবে আশঙ্কাজনক কোনো নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় এখনো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়নি, যা স্বাভাবিক বর্ষা আবহাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২-৩ দিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ কিছু এলাকায় মাঝারি বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে তা কোন স্থানে কবে ঘটবে, তা আগাম বলা কঠিন, কারণ বৃষ্টির প্রকৃতি এখনো ছড়ানো-ছিটানো।
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় হালনাগাদ আবহাওয়া বুলেটিন প্রকাশের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য তথ্য হালনাগাদ করছে অধিদপ্তর।
যেহেতু হঠাৎ করে মাঝারি বা ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে, তাই ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া যারা যানজটে পড়তে পারেন, তাদের আগেভাগে বের হতে বলা হয়েছে।
নিচু এলাকায় পানি জমে যেতে পারে—বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার কিছু এলাকায়, যেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল। তাই বৃষ্টির সময় সেসব এলাকায় চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের আবহাওয়া রয়েছে মিশ্র অবস্থায়—একদিকে তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয়, অন্যদিকে রয়েছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, কোনো ঘূর্ণিঝড় বা ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা নেই।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এটি মৌসুমি বর্ষার স্বাভাবিক গতি। তবে পরিবর্তনশীল জলবায়ুর কারণে প্রতিটি দিনেই আবহাওয়ার ধরন ভিন্ন হতে পারে, তাই সচেতন থাকা জরুরি।
সর্বশেষ তথ্যের জন্য নিয়মিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের হালনাগাদ বুলেটিন ও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে চোখ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ