
ছবি: সংগৃহীত
গোপালগঞ্জে চলমান সহিংস পরিস্থিতির কারণে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিতব্য ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড ও গোপালগঞ্জ জেলা ব্যতীত অন্য জেলাগুলোর পরীক্ষা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় গোপালগঞ্জ জেলার এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নতুন পরীক্ষার তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে।”
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গোপালগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিতব্য ভূগোল (তত্ত্বীয়) ২য় পত্র (পত্র কোড-১২৬) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন গোপালগঞ্জ জেলা ব্যতীত দেশের অন্য জেলাসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডে নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। গোপালগঞ্জ জেলার পরীক্ষার্থীদের জন্য স্থগিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি পরে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোপালগঞ্জে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৮টা থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে। কারফিউর আওতায় থাকার ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত থাকবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে।
গোপালগঞ্জে পরীক্ষার স্থগিত হওয়া ঘটনা নতুন নয়। গত ১০ জুলাই বন্যার কারণে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষাগুলোও স্থগিত হয়েছিল। ফলে চলতি এইচএসসি পরীক্ষা বর্ষার প্রতিকূলতা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রভাবে কয়েক দফায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার শুরু হয়েছে গত ২৬ জুন থেকে। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। বোর্ডের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষা ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এবং পরবর্তীতে ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
গোপালগঞ্জ জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ও সহিংসতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি পরীক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগজনক এবং তাদের শিক্ষা জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
গোপালগঞ্জের পরীক্ষার্থীরা নিরাপত্তার কারণে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক এবং হতাশার ছায়া নেমে এসেছে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত স্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছেন যেন সন্তানরা নির্ভয়ে পরীক্ষা দিতে পারে।
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিতাদেশ শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। সহিংসতার কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে নেয়া এই কঠিন সিদ্ধান্ত পরীক্ষার্থীদের জীবন ও পড়াশোনায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরীক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ