
ছবি: সংগৃহীত
গোপালগঞ্জে সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জোরালো বার্তা এসেছে—এই ঘটনায় যারাই জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জের সহিংসতায় যারা অন্যায় করেছেন, তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।”
গোপালগঞ্জে সহিংসতা সৃষ্টির আগে গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে কোনো পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “গোয়েন্দাদের কাছে কিছু তথ্য অবশ্যই ছিল। তবে এত বড় পরিসরে সহিংসতা হবে, সেটি অনুমান করা সম্ভব হয়নি।” তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলেও কখনো কখনো বাস্তবের বিস্তৃতি অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এই বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এই বিষয়ে আপনিও অনেক কথা বলতে পারেন। যার যে বক্তব্য, সে সেটা দিতে পারে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে দায়িত্বশীল মন্তব্য করাই উত্তম।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। “আমরা আগের দিনই সেখানে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা আর কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য না করে।” তিনি বলেন, বর্তমানে গোপালগঞ্জে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সরকার আরও কঠোর ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকে পূর্ণ সমন্বয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আবারও স্পষ্ট করে বলেন, “যারা এই সহিংসতায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের কেউই আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না। তদন্তের ভিত্তিতে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে এবং তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে গত কয়েকদিনে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, যানবাহন ভাঙচুর, সরকারি স্থাপনায় হামলা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা শহরে কারফিউ জারি করা হয় এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই কঠোর বার্তা সাধারণ মানুষের মাঝে আশ্বাসের প্রতিচ্ছবি ফেলেছে।
নাগরিক সমাজ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুততম সময়ের প্রতিক্রিয়া এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে তারা এটাও বলছেন, গোয়েন্দা তথ্যের যথাযথ ব্যবহারে আরও সতর্কতা ও জবাবদিহিতা জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ