
ছবি: সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’। এ ছাড়া বৈঠকে আরও দুটি অধ্যাদেশ—বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ এবং মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়াও অনুমোদিত হয়েছে।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেয়েছে। তবে এ খসড়ায় পূর্ববর্তী অধ্যাদেশ থেকে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে বা নতুন কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র, মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, একাধিক ঠিকানা সংশোধনসহ ডিজিটাল তথ্য সমন্বয় সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম গতিশীল করা এবং সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য এই অধ্যাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রশাসনিক সূত্রগুলো মনে করছে।
একই সভায় ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর খসড়াও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এই খসড়ার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে—দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা, দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রক্রিয়াজাত সেবা সহজ করা এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী কাঠামোকে আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা। তবে এখানেও সংশোধিত ধারা বা পরিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও সভায় ‘মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ—২০২৫’-এর খসড়ারও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে অঙ্গদানের প্রক্রিয়া, দাতা ও গ্রহীতার অধিকার, মেডিকেল বোর্ডের কাঠামো এবং বেআইনি অঙ্গ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এখানেও ভেটিংয়ের পরই পূর্ণাঙ্গ আইনি ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো একটি অধ্যাদেশ এমন সময় অনুমোদিত হলো, যখন দেশজুড়ে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও প্রস্তুতি নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেই প্রেক্ষাপটে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও সংশোধনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে বিডার সংস্কারের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটানোর সংকল্প এবং মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন আধুনিকায়নের মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষার বার্তাও দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
উপদেষ্টা পরিষদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি অধ্যাদেশই এখন মুদ্রণ প্রস্তুতির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা অধ্যাদেশ হিসেবে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। এরপরই তা কার্যকর ধরা হবে।
এই অধ্যাদেশগুলো কেবল প্রশাসনিক কাঠামো নয়, নির্বাচনী ও মানবিক ব্যবস্থাপনাতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ