
ছবি: সংগৃহীত
চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনেই বৈদেশিক মুদ্রার গুরুত্বপূর্ণ খাত রেমিট্যান্স থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১৪২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার করে দেশে আসছে এই আয়। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক এক ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "এ বছর জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। গত বছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় এবার ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।"
তিনি আরও জানান, কেবল ১৬ জুলাই একদিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল আজহার পরও রেমিট্যান্স প্রবাহে এই ধারাবাহিকতা অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক। এটি রপ্তানি ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড। আগের বছর এই অঙ্ক ছিল ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলারের মতো।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের মাধ্যমে এই আয় আসছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পেছনে হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর নজরদারি, প্রণোদনার হার ২.৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে সহজ রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ বৃদ্ধির প্রভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশের রেমিট্যান্স আয় ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে। এমনকি তারা বলছেন, বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা বাড়লে এবং প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে আরও সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে আগামী ৩ বছরে রেমিট্যান্স ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারে।
তবে এর সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন যে, রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হলে নতুন শ্রমবাজারে প্রবেশ, দক্ষ কর্মী পাঠানো এবং অবৈধ চ্যানেল (হুন্ডি) পুরোপুরি নির্মূল করা জরুরি। দেশের বৈদেশিক আয় ধরে রাখতে এই খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপরও জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ