
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে গণতন্ত্রের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। নতুন ঘোষণায় দেশটির সরকার জানিয়েছে, ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী তরুণদের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে যাচ্ছে তারা। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ব্রিটিশ সরকার বলেছে, এটি সংসদীয় অনুমোদন সাপেক্ষ হলেও চূড়ান্ত রূপ পেলে ব্রিটেনের গণতন্ত্রে এক যুগান্তকারী সংস্কার ঘটবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের মতো অঞ্চলের সঙ্গে দেশব্যাপী ভোটাধিকার নীতিতে সামঞ্জস্য আসবে। বর্তমানে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীরা আঞ্চলিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। তবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে এতদিন পর্যন্ত ১৮ বছর বয়স হলেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যেত।
এ বিষয়ে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নার এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা গণতন্ত্রে অংশগ্রহণে বিদ্যমান বাধাগুলো ভেঙে দিয়ে আরও অধিক মানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।"
এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন ব্রিটেনে ভোটার উপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৫৯.৭ শতাংশ, যা ২০০১ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন।
যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির তথ্যানুযায়ী, যেসব দেশে ভোটের বয়স ১৬ করা হয়েছে, সেখানে নির্বাচনের ফলাফলে বড় ধরনের কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি। বরং দেখা গেছে, ১৬ বছর বয়সীরা ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের তুলনায় ভোটদানে বেশি আগ্রহ দেখায় এবং রাজনৈতিক সচেতনতাও বৃদ্ধি পায়।
এ পদক্ষেপ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরও একটি বাস্তবায়ন। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি, যারা এক বছর আগে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসে, তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৬ বছরে ভোটাধিকার প্রদানের প্রতিশ্রুতি ছিল।
প্রস্তাবিত সংস্কারের আওতায় ভোটার শনাক্তকরণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার পরিকল্পনাও করেছে সরকার। এবার থেকে ডিজিটাল ব্যাংক কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ভেটেরান কার্ডকেও ভোটার আইডি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
নতুন নীতিমালায় বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এখন থেকে ৫০০ পাউন্ডের বেশি রাজনৈতিক অনুদান দিতে হলে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মুখে পড়তে হবে। শেল কোম্পানির মাধ্যমে অনুদান দেওয়ার পথও বন্ধ করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের আলোকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলেও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেছিলেন, "ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করা উচিত।"
তাঁর মতে, দেশের তরুণ প্রজন্ম আগেভাগেই জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত হলে গণতন্ত্র আরও সুসংহত হবে এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়বে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ভোটার হওয়ার জন্য ১৮ বছর বয়স বাধ্যতামূলক হলেও, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপকে অনেকে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ালে শুধুমাত্র ভোটের হার বাড়বে না, বরং রাজনীতির প্রতি আগ্রহ, সচেতনতা ও দায়িত্ববোধও বাড়বে— যা একটি টেকসই গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
যুক্তরাজ্যের এই সংস্কার প্রস্তাব একদিকে যেমন দেশটির নিজস্ব গণতান্ত্রিক কাঠামোতে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হবে, অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও এ নিয়ে আলোচনা এবং অনুসরণযোগ্য মডেল গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ হয় না—এই সত্য ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাপী।
বাংলাবার্তা/এমএইচ