
ছবি: সংগৃহীত
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নতুন দফার ভয়াবহ হামলায় বৃহস্পতিবার নারী ও শিশুসহ অন্তত ২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু বেসামরিক মানুষ। গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় মেডিকেল সূত্রগুলোর বরাতে জানা গেছে, সর্বশেষ হামলায় ইসরাইলি বাহিনী গাজার উত্তরের জাবালিয়া শহরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ চালায়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন।
একই সময়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের জেইতুন এলাকায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—গাজার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম আশ্রয়স্থল ক্যাথলিক চার্চ ‘হলি ফ্যামিলি’। এ হামলায় দুইজন নিহত হন এবং গুরুতর আহত হন চার্চের প্যারিস যাজকসহ কয়েকজন আশ্রয়প্রার্থী। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বহুবার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, তবে খ্রিস্টানদের এই প্রধান উপাসনালয়ে হামলা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার গাজা সিটির কেন্দ্রীয় এলাকায় ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় আরও আটজন প্রাণ হারান। স্থানীয়দের দাবি, তারা খাদ্য ও পানির জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু ত্রাণ বিতরণ শুরুর আগেই ইসরাইলি ড্রোন ও গোলাবর্ষণের শিকার হন।
জেইতুনের আরও একটি আবাসিক ভবনে চালানো পৃথক বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত চারজন বেসামরিক নাগরিক। এদের মধ্যে দুইজন শিশু ও একজন গর্ভবতী নারী ছিলেন বলে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রের সূত্রে জানা গেছে।
মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরেও চালানো হয়েছে ভয়াবহ হামলা। সেখানে সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত মানুষদের অস্থায়ী তাবুতে ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইল। এতে নারী ও শিশুসহ আরও পাঁচজন নিহত হন। বহু লোক আহত অবস্থায় আশপাশের ক্লিনিকে ভর্তি হন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চলমান এই হামলার মধ্যেই জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসলেও ইসরাইল সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সহিংস অভিযানে এ পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫৮ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গাজায় যত মানুষ নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ শিশু ও নারী।
মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে গাজার অভ্যন্তরে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র ঘাটতির মধ্যেই একের পর এক সামরিক হামলায় বেড়ে চলছে লাশের মিছিল।
এই যুদ্ধের ভয়াবহতা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
পাশাপাশি, গাজায় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার দাখিল করা মামলার ভিত্তিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা মামলাও বিচারাধীন রয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে)।
অন্যদিকে, ইসরাইল এই হামলাগুলোকে ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ বলে ব্যাখ্যা করে আসছে। তবে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় এবং ফিলিস্তিনের পাশে সংহতির ঢেউ ক্রমেই বাড়ছে।
সূত্র: আনাদুলু এজেন্সি
বাংলাবার্তা/এমএইচ