
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আকাশে আবারও জমছে মেঘ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগেই শুরু হতে যাচ্ছে নতুন করে টানা বর্ষণ। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে, যা প্রভাব ফেলবে দেশের প্রায় সবগুলো বিভাগে। এর কারণে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে টানা পাঁচ দিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) এই পূর্বাভাস দেন।
আবহাওয়ার দৈনিক বুলেটিনে জানানো হয়েছে, রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বহু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জায়গায়ও দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে সামান্য পরিবর্তন দেখা দিতে পারে—দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে একই প্রবণতা বজায় থাকবে। এদিন ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি নামবে। রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়ও একই ধরনের আবহাওয়া থাকবে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঢাকাসহ খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকায়ও বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ভেতরে কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় আবারও দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা থাকছে। এ সময়ও তাপমাত্রার তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে যখনই নতুন লঘুচাপ তৈরি হয়, তখন তা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এবারও সেই আশঙ্কা রয়েছে। লঘুচাপ শক্তি সঞ্চয় করলে সেটি নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। ফলে সাগরে জেলেদের জন্য সতর্কসংকেত জারি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকাগুলোকে তীরে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
প্রকৃতির এই টানা বর্ষণ একদিকে কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে, আবার অন্যদিকে হতে পারে অভিশাপ।
-
ধান চাষের ক্ষেত্র: এই সময়ের বৃষ্টিপাত আমন ধানের জন্য উপকারী হতে পারে। মাঠে পানির ঘাটতি দূর হলে ধানের গতি বাড়বে।
-
সবজি ও অন্যান্য ফসল: তবে টানা ভারি বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে গেলে সবজি ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হতে পারে।
-
শহুরে জীবনযাত্রা: ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে সড়ক ডুবে যাওয়া, যানজট, বিদ্যুতের তারে শর্টসার্কিট, ড্রেন উপচে পড়া ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন—
-
বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে অবস্থান না করার জন্য।
-
অতি প্রয়োজন ছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করার জন্য।
-
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত সতর্কবার্তা শোনার জন্য।
-
শহুরে এলাকায় বসবাসকারীদের পানি জমা রাস্তায় সতর্ক হয়ে চলাফেরা করার জন্য।
মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় এবং নতুন লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনায় দেশের ওপর টানা কয়েক দিনের জন্য বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে শুষ্ক আবহাওয়ার অবসান ঘটলেও কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেপ্টেম্বরে এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি বর্ষাকালের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর প্রভাব ক্রমেই অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ