
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক এবং মর্যাদাপূর্ণ সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস)। এর প্রতিটি ধাপকে ঘিরে থাকে চাকরিপ্রার্থীদের তীব্র আগ্রহ, প্রস্তুতি এবং নানা ধরনের আলোচনার ঝড়। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার এই পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় চার লাখ পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষা শেষ হতেই প্রশ্নপত্রের মান, জটিলতা এবং উত্তর করার সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। পরীক্ষার্থীদের বড় অংশের দাবি— এবারের প্রশ্নপত্র ছিল গতবারের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন ও বিশ্লেষণধর্মী। তাদের মতে, কাটমার্ক নামতে পারে ১০০ থেকে ১১০ নম্বরের মধ্যে।
অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীরা বলছেন, এবারের প্রশ্নপত্রের সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল গণিত, মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান এবং আইসিটি। শুধু মুখস্থভিত্তিক জ্ঞানের ওপর নির্ভর না করে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে অনেক বেশি বিশ্লেষণধর্মী এবং সময়সাপেক্ষ। এতে পরীক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে সবগুলো প্রশ্ন সমাধান করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান রাসেল বলেন, “আমি প্রথমবার বিসিএস প্রিলিতে অংশ নিলাম। আমার প্রস্তুতি তুলনামূলক কম ছিল, কিন্তু তবুও মনে হয়েছে এবারকার প্রশ্ন অন্যবারের চেয়ে অনেক অ্যাডভান্স। বিশেষ করে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্নগুলো দেখে মনে হয়েছে শুধুমাত্র সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরাই এগুলো সমাধান করতে পারবে। এই জায়গাটায় অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেছে।”
গণিত ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রশ্নপত্রও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, সিলেবাসে যে বই বা লেখকদের নাম মুখস্থ করার নির্দেশনা থাকে, তার বাইরে গিয়েও প্রশ্ন এসেছে। এতে অনেকেই হতাশ হয়েছেন।
পরীক্ষার্থী রাহাদ উদ্দিন বলেন, “প্রশ্ন হাতে নিয়েই কিছুক্ষণের জন্য হেসে ফেলেছি। মানসিক দক্ষতা ও আইসিটি অংশে এত বেশি বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন এসেছে যে সেগুলো সমাধান করার মতো সময় হাতে ছিল না। বাংলা সাহিত্যে সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন এসেছে। ইংরেজি সাহিত্যও একইভাবে কঠিন ছিল। প্রিলিমিনারি পর্যায়ে এত অ্যাডভান্স প্রশ্ন করাটা পরীক্ষার্থীদের জন্য অনেক চাপ তৈরি করেছে।”
প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পরীক্ষাটি নিয়ে চলছে সরব আলোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গ্রুপ এবং শিক্ষার্থী মহলে হাস্যরসের নানা পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে। একজন পরীক্ষার্থী সুলতানা রিমা ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “প্রশ্ন দেখার পর মাথা আর ঠিক ছিল না। তাই চোখ বন্ধ করে ২০০টি প্রশ্ন দাগিয়ে এসেছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”
এমন মন্তব্যগুলো একদিকে যেমন পরীক্ষার্থীদের হতাশা প্রকাশ করছে, অন্যদিকে কঠিন প্রশ্নের কারণে তৈরি হওয়া মানসিক চাপকেও তুলে ধরছে।
বিসিএসকে ঘিরে বাংলাদেশে চাকরিপ্রার্থীদের স্বপ্ন, প্রত্যাশা এবং সামাজিক মর্যাদার প্রশ্ন জড়িত। প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিলেও সফল হতে পারেন মাত্র কয়েক হাজার। তাই পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে প্রশ্নপত্রের মান এবং জটিলতা নিয়ে আলোচনার শেষ থাকে না।
৪৭তম বিসিএস প্রিলির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বরং এবারের প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক এবং প্রতিক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি। অনেকে মনে করছেন, কঠিন প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থীদের মৌলিক দক্ষতা যাচাই করা হয়েছে, আবার অন্যরা বলছেন, অতি বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন অনেক মেধাবী প্রার্থীকেও নিরুৎসাহিত করবে।
পরীক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনুমান করা হচ্ছে, এবারের কাটমার্ক ১০০ থেকে ১১০ এর মধ্যে হতে পারে। তবে পিএসসি (বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন) আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করার আগে এ নিয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে না।
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শেষ হলেও এর প্রতিক্রিয়া এবং আলোচনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী সমাজে। কেউ কেউ একে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে সমালোচনা করছেন অতি জটিল প্রশ্ন প্রণয়নের জন্য। সব মিলিয়ে এবারের বিসিএস প্রিলি শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ