
ছবি: সংগৃহীত
দেশব্যাপী টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে সরকারের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন। দেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে নিরাপদ টাইফয়েড টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
এই কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। একই সঙ্গে জেলা, উপজেলা ও থানার সব পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মাউশির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্দেশনা চিঠি আকারে প্রকাশ করা হয়।
মাউশি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের এই ক্যাম্পেইনে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকা নিতে পারবে। এছাড়া, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে রয়েছে—তাদের মধ্যে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা নিকটবর্তী ইপিআই (এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন) টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে।
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিন কার্যকর ও নিরাপদ বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। বিশেষ করে নগর ও গ্রামীণ এলাকায় শিশুদের মধ্যে টাইফয়েডের প্রকোপ বেশি হওয়ায় এ কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠিতে একাধিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে টিকাদান কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন হয়। নির্দেশনার মূল বিষয়গুলো হলো—
১. উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা সব প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেবেন, যাতে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। পাশাপাশি এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। এজন্য জেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ফেসবুক পেজে নির্দেশনামূলক চিঠি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।
২. সহকারী উপজেলা বা সহকারী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা তাদের নিজ নিজ ক্লাস্টারের অধীন বিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি তত্ত্বাবধান করবেন, যাতে কোনো ধরনের অব্যবস্থা না ঘটে।
৩. জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে স্কুলগুলোতে গিয়ে কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করবেন। অর্থাৎ এলোমেলোভাবে স্কুল বাছাই করে সেখানকার কার্যক্রম পরীক্ষা করবেন।
৪. প্রধান শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে, সব শিক্ষক যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কার্যক্রমে অংশ নেন। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের সব সহকারী শিক্ষকদেরও এই কর্মসূচিতে যুক্ত করতে হবে।
৫. শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন, টিকা গ্রহণ নিশ্চিতকরণ, টিকাদান কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রোভার স্কাউট বা শিক্ষার্থীদের নিয়োজিত করা এবং অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব পালন করবেন।
৬. রেজিস্ট্রেশন ফরমের তথ্য সঠিকভাবে পূরণ হচ্ছে কিনা—এটি তদারকির দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ওপর।
৭. কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বিশেষ শিক্ষা) মো. খালেদ সাইফুল্লাহকে সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে এই ক্যাম্পেইনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যৌথভাবে এই ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হবে মূল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। এজন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি বলে মাউশি চিঠিতে উল্লেখ করেছে।
চিঠিতে জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে প্রচারণার ওপর। শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে। সেই সঙ্গে অভিভাবকদেরও টিকাদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে টাইফয়েড একটি দীর্ঘস্থায়ী জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অনিরাপদ পানি ও খাদ্যের কারণে এ রোগ শিশুদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। টিকাদান কর্মসূচি যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আগামী প্রজন্মকে টাইফয়েডের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
আগামী অক্টোবরের এই টিকাদান ক্যাম্পেইনকে সফল করার লক্ষ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলোর একটি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ