
ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া কাপের মতো বড় টুর্নামেন্ট মানেই রোমাঞ্চ, চাপ আর নানা হিসাব-নিকাশ। এমনিতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় টুর্নামেন্টে বারবার জটিল সমীকরণের মুখোমুখি হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। ‘বি’ গ্রুপে টিকে থাকার লড়াইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ রানের দারুণ জয় তুলে নিলেও এখনো নিশ্চিত হয়নি সুপার ফোরে বাংলাদেশের জায়গা। আগামী কয়েক ঘণ্টা কিংবা দিনের খেলা নির্ধারণ করে দেবে টাইগারদের ভাগ্য।
বুধবারের (১৮ সেপ্টেম্বর) ম্যাচে বাংলাদেশকে জেতার বিকল্প ছিল না। এশিয়া কাপে টিকে থাকতে হলে শেহজাদ-রশিদ খানের আফগানিস্তানকে হারাতেই হতো। ম্যাচে ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো না হলেও শেষ দিকে দারুণ লড়াই করে ৮ রানের জয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিব আল হাসানরা। এ জয় বাংলাদেশের টুর্নামেন্টে বেঁচে থাকার স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছে। তবে শুধু জিতলেই হয়নি, টাইগারদের এখন তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে অন্য দলের ফলাফলের দিকে।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। এখন বাংলাদেশের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে সেই ম্যাচের ওপর। হিসাবটা সহজ—যদি শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানকে হারাতে পারে, তবে বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়ে সুপার ফোরে জায়গা করে নেবে। এ ক্ষেত্রে নেট রানরেট নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না।
কিন্তু যদি শ্রীলঙ্কা হারে, তখন সমীকরণ দাঁড়াবে জটিল। কারণ, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান—এই তিন দলই সমান ৪ পয়েন্ট করে পাবে। তখন ভাগ্য নির্ধারণ করবে নেট রানরেট।
নেট রানরেট সব সময়ই ক্রিকেটের সবচেয়ে অস্বস্তিকর সমীকরণগুলোর একটি। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে যদি আফগানিস্তান বড় ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।
বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, যদি আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৭০ রানের ব্যবধানে অথবা ৫০ বল হাতে রেখে হারাতে পারে, তবে শ্রীলঙ্কার নেট রানরেট বাংলাদেশের নিচে নেমে যাবে। তখন বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান উঠে যাবে সুপার ফোরে। অর্থাৎ, শ্রীলঙ্কার ভাগ্য নির্ভর করছে কেবল হারবে কি না তার ওপর নয়, বরং কত ব্যবধানে হারবে সেটার ওপরও।
শ্রীলঙ্কার সামনে এখনো সুবিধাজনক পথ খোলা। তারা যদি জিততে পারে, বাংলাদেশ স্বস্তিতে সুপার ফোরে জায়গা পাবে। কিন্তু হারলেই লঙ্কানদের কপালে ভাঁজ পড়বে। অন্যদিকে আফগানিস্তানও জানে, শুধু জিতলেই হবে না; বড় ব্যবধানে জিততে হবে। তাই শেষ ম্যাচে লড়াই হবে সমীকরণ মেলানোর, বলতেই হবে এটি একপ্রকার ‘ভার্চুয়াল কোয়ার্টার ফাইনাল’।
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। কারও কারও মতে, এবার ভাগ্য বাংলাদেশের পক্ষে থাকতে পারে, কারণ আফগানিস্তানের জন্য এত বড় ব্যবধানে জেতা সহজ নয়। তবে ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করাই সমাধান।
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে এর আগে একাধিকবার জটিল সমীকরণের কারণে বাংলাদেশকে শেষ মুহূর্তে আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকতে হয়েছে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ, ২০১২ সালের এশিয়া কাপ কিংবা সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ—প্রতিটি আসরেই এ ধরনের অঙ্ক কষতে হয়েছে। এবারও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
সব মিলিয়ে, টাইগাররা মাঠের লড়াইয়ে নিজেদের কাজ সেরে ফেলেছে। এখন তাঁদের চোখ শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তানের ম্যাচে। জয়-পরাজয়ের হিসাব মিলে গেলেই হয়তো হাসিমুখে সুপার ফোরে নামবে সাকিব-লিটনরা, না হয় আবারও হতাশার গল্পে যোগ হবে নতুন অধ্যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ