
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশজুড়ে শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে শুরু হয়ে গেছে ছুটির আমেজ। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তর—সবখানেই এবার দেখা দেবে টানা ছুটির আবহ। শিক্ষার্থীরা যেমন লম্বা ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে উৎসব উপভোগ করতে পারবে, তেমনি সরকারি চাকরিজীবীরাও টানা কয়েক দিনের ছুটি কাটানোর সুযোগ পাবেন। শিক্ষা ক্যালেন্ডার ও সরকারি প্রজ্ঞাপনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, এ বছরের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ ছুটি শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষদের সামনে এক বিশেষ আনন্দ বয়ে আনছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (রোববার) থেকে ৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত স্কুল-কলেজগুলোতে দুর্গাপূজা, ফাতেহা-ই-ইয়াজ দাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা ও শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজাসহ একাধিক ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের কারণে ছুটি থাকবে।
এবার যেহেতু ২৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ও ২৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পড়ছে সাপ্তাহিক ছুটি, শিক্ষার্থীরা কার্যত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ছুটি শুরু করবে এবং ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তা চলবে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীরা টানা ১২ দিনের ছুটি উপভোগ করার সুযোগ পাবে।
শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী—
-
২ অক্টোবর: বিজয়া দশমী
-
৪ অক্টোবর: ফাতেহা-ই-ইয়াজ দাহম
-
৫ অক্টোবর: প্রবারণা পূর্ণিমা
-
৬ অক্টোবর: শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজা (ঐচ্ছিক ছুটি হিসেবে উল্লেখ, তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কার্যকর হবে)
এর ফলে দুর্গাপূজার ছুটির সঙ্গে মিলেমিশে এক অনন্য দীর্ঘ ছুটির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, অনুমোদিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব প্রতিষ্ঠানকে এই সময়সূচি অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত ছুটি মানতে হবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। যেহেতু এগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তাই তাদের ছুটি নির্ধারণ হবে নিজ নিজ সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ছুটির দৈর্ঘ্যে পার্থক্য থাকতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতোই সরকারি অফিসগুলোতেও দুর্গাপূজায় ছুটির আমেজ থাকবে। সরকার ঘোষিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী, ১ ও ২ অক্টোবর দুর্গাপূজার সরকারি ছুটি থাকবে। এরপরই ৩ ও ৪ অক্টোবর সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) থাকায় সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা টানা ৪ দিনের ছুটি ভোগ করবেন।
যদিও শিক্ষার্থীদের মতো এত দীর্ঘ ছুটি নয়, তবে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও এটি এক ধরনের বিরল সুযোগ, কারণ সরকারি ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে যাবে। ফলে অনেকে এ সময় নিজ গ্রামের বাড়ি বা প্রিয়জনের কাছে গিয়ে উৎসব উপভোগ করতে পারবেন।
দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবই নয়, বরং এটি এখন বাংলাদেশের একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ উৎসবকে ঘিরে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। দীর্ঘ ছুটি পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেমন বাড়ি ফিরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে, তেমনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, মেলা, আরাধনা ও সামাজিক মিলনমেলায় ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাবে।
অন্যদিকে, ছুটি ঘিরে পর্যটন খাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কক্সবাজার, সিলেট, সুন্দরবনসহ পর্যটন এলাকাগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ছুটিকে কেন্দ্র করে অনেকে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও গতিশীলতা আনবে।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ছুটি শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যত ১২ দিনের, আর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য টানা ৪ দিনের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটি নির্ধারণ হবে।
এবারের দুর্গাপূজাকে ঘিরে তাই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী—সবাইয়ের মধ্যে এক ধরনের উৎসবমুখর আনন্দ বিরাজ করছে। দীর্ঘ এই ছুটি কেবল ধর্মীয় উৎসবের নয়, বরং পারিবারিক মিলনমেলা, ভ্রমণ ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতিরও এক বিরল সুযোগ হয়ে উঠছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ