
ছবি: সংগৃহীত
দেশের বাজারে সোনার দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) নতুন করে সোনার দাম সমন্বয় করেছে, যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সর্বোচ্চ মানের ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরির দাম এক লাফে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ টাকা। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে এ নতুন দাম কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের এক বৈঠকে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এর মাত্র এক সপ্তাহ আগেই, অর্থাৎ ১০ সেপ্টেম্বর, সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। তার আগে সেপ্টেম্বরের ৯, ৮, ৪ ও ২ তারিখে এবং আগস্টের ৩১ ও ২৭ তারিখে মোট ছয়বার দাম বাড়ানো হয়েছিল। অর্থাৎ অল্প সময়ের ব্যবধানে সাতবার দাম বাড়ল, যা ভোক্তাদের মাঝে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বাজুসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী—
-
২২ ক্যারেটের সোনা: প্রতি ভরি ৩,৬৭৫ টাকা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৮৯,৬২২ টাকা।
-
২১ ক্যারেটের সোনা: প্রতি ভরি ৩,৪৯৯ টাকা বাড়িয়ে হয়েছে ১,৮২,০০২ টাকা।
-
১৮ ক্যারেটের সোনা: প্রতি ভরি ২,৯৯৮ টাকা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৫৫,১৪৩ টাকা।
-
সনাতন পদ্ধতির সোনা: প্রতি ভরি ২,৫৫৫ টাকা বাড়িয়ে হয়েছে ১,২৮,৭০১ টাকা।
এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেটের সোনা প্রতি ভরি বিক্রি হয়েছিল ১,৮৫,৯৪৭ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে আরও ৩,৬৭৫ টাকা।
শুধু সোনা নয়, রূপার দামও নতুন করে সমন্বয় করা হয়েছে।
-
২২ ক্যারেটের রূপা: প্রতি ভরি ৬৬৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩,৪৭৬ টাকা।
-
২১ ক্যারেটের রূপা: প্রতি ভরি ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে হয়েছে ৩,৩১৩ টাকা।
-
১৮ ক্যারেটের রূপা: প্রতি ভরি ৫৮৪ টাকা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮৪৬ টাকা।
-
সনাতন পদ্ধতির রূপা: প্রতি ভরি ৪০৯ টাকা বাড়িয়ে হয়েছে ২,১৩৫ টাকা।
বাজুসের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ছে, তারই প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে। স্থানীয় বাজারে সোনার জোগান নির্ভর করে বৈদেশিক বাজার থেকে আমদানির ওপর। ডলার সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে এ দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করছে। বাজুস জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একদিকে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না বাড়ালে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ত না। অন্যদিকে ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। রাজধানীর গহনার দোকানে গিয়ে একাধিক ক্রেতা জানিয়েছেন, বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য সোনা কেনার পরিকল্পনা করলেও এই দামে তা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গহনা ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে যে, ঘন ঘন দাম সমন্বয়ের কারণে ক্রেতাদের আস্থা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যদি ডলার সংকট কাটে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল হয়, তবে সোনার দাম আবারও নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সোনার দাম সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলার সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে ঘন ঘন দাম বাড়ানোর কারণে এটি ভোক্তার জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সোনা এখন আর হাতের নাগালে থাকছে না।
আন্তর্জাতিক বাজারের গতিধারা অনুযায়ী, সোনার দাম সামনের মাসগুলোতেও উঁচু পর্যায়ে থাকতে পারে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সপ্তমবারের মতো সোনার দাম বৃদ্ধির খবরে বাজারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ক্রেতারা যেখানে হতাশ, সেখানে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির খরচ ও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এড়ানো সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তার জন্য সোনা এখন বিলাসবহুল পণ্য হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ