
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কর প্রশাসনে একযোগে ব্যাপক রদবদল এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জারি করা পৃথক তিনটি আদেশে ১৮২ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার দপ্তর পরিবর্তন করা হয়েছে, এক যুগ্ম কর কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং গাজীপুরের এক কর পরিদর্শককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে এনবিআরের চলমান প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১৮২ কর্মকর্তার বদলি
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসন) তানভীর আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ১৮২ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার বদলির তথ্য জানানো হয়। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘদিন একই দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। এনবিআরের মতে, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, দায়িত্ব বণ্টনে স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা হবে। কর প্রশাসনের ভেতর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিয়মিত এই ধরনের রদবদল প্রয়োজন বলে এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
যুগ্ম কর কমিশনারের বাধ্যতামূলক অবসর
এদিন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। কর অঞ্চল-১৬ এ কর্মরত যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তার চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় এবং জনস্বার্থে সরকার মনে করেছে তাকে অবসরে দেওয়া প্রয়োজন। ফলে তিনি বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সব সুবিধা ভোগ করবেন। সরকারি সূত্র বলছে, এই ধরনের বাধ্যতামূলক অবসর সাধারণত তখনই কার্যকর হয় যখন সরকারের কাছে কোনো কর্মকর্তা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন বা অস্বস্তি থাকে, অথবা দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তার স্থলে নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়।
কর পরিদর্শকের সাময়িক বরখাস্ত
এছাড়া গাজীপুর কর অঞ্চলে কর্মরত কর পরিদর্শক মিজ কাজী নূরে সোহেলাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান স্বাক্ষরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ এবং ‘পলায়ন’-এর গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) এবং ৩(গ) অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিধি ১২ অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে গাজীপুর কর কমিশনারের কার্যালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
সংস্কারের অংশ হিসেবে পদক্ষেপ
এনবিআরের ভেতরের সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে কর প্রশাসনে নানা ধরনের অনিয়ম, স্বচ্ছতার অভাব এবং রাজস্ব সংগ্রহে ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কর আদায়ে গাফিলতি, দায় এড়ানো, ঘুষ গ্রহণ কিংবা পেশাদারিত্বে ঘাটতি – এসব কারণে অনেক কর্মকর্তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর প্রশাসনকে আধুনিক ও দক্ষ করতে হলে নিয়মিত রদবদল, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য।
এ প্রসঙ্গে একজন কর বিশেষজ্ঞ বলেন, “১৮২ কর্মকর্তার একযোগে বদলি নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি আনবে। তবে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কেবল বদলি নয়, আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”
জনস্বার্থের অগ্রাধিকার
সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘জনস্বার্থ’কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা সাময়িক বরখাস্তের মতো সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের পর গৃহীত হয়। এনবিআরের এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোও সেই প্রক্রিয়ার অংশ।
সব মিলিয়ে, কর প্রশাসনে এক দিনে এত বড় রদবদল এবং শৃঙ্খলাবিধিমূলক ব্যবস্থা একসঙ্গে নেওয়া বিরল ঘটনা। এতে একদিকে এনবিআরের ভেতরে স্বচ্ছতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, অন্যদিকে কর্মকর্তাদের মধ্যে সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে এনবিআরের সামগ্রিক দক্ষতা এবং রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাবার্তা/এসজে