
ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের জয়ের শিরোনাম এখন নেই, বরং খাদের কিনারায় থাকা পরিস্থিতি নিয়েই ক্রিকেটপ্রেমীদের চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হয়েছে। আজ আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে লড়াইয়ে নামছে টাইগাররা, তা শুধু একটি ম্যাচ নয়, বরং টুর্নামেন্টে টিকে থাকার ডু অর ডাই লড়াই। এই ম্যাচে কেবল জয়ই যথেষ্ট নয়; জয়ের ব্যবধানও হতে হবে যথেষ্ট বড়, নাহলে রানরেটের মারপ্যাঁচে বাংলাদেশের সুপারফোরে যাওয়ার স্বপ্ন উধাও হয়ে যাবে।
শুরুর দিনগুলো—উৎকণ্ঠা ও হতাশা
বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযান শুরু হয়েছিল হংকংয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে। তবে সেই জয় ছিল অপ্রচলিত এবং কাঙ্ক্ষিতের তুলনায় অনেক কম কার্যকর। ১৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েও টাইগাররা ১৭ ওভার ৪ বল খেলে হংকংকে মাত্র পেরোতে সক্ষম হয়। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুযোগ ছিল নিজেদের দুর্বলতাগুলো দূর করার, কিন্তু সেই সুযোগ লিটন দাস ও তার দল হালকাভাবে নেন। দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন শূন্য রানে, অধিনায়ক লিটন দাসও মাত্র ২৮ রানে আউট হন। শেষ সময়ে জাকের আলি ও শামীম হোসেন কিছুটা লড়াই দেখালেও বাংলাদেশ ১৩৯ রানে থামে, যা শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৪ ওভার ৪ বলেই অতিক্রম করে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের রানরেট -০.৬৫০, আফগানিস্তানের +৪.৭০০।
আফগানিস্তান—শক্তিশালী প্রতিপক্ষ
অন্যদিকে আফগানিস্তান সব বিভাগে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। ব্যাটিংয়ে আজমতউল্লাহ ওমরজাই, ওপেনার সেদিকুল্লাহ-নবীরাও ফর্মে, বল হাতে রশিদ খান, গুলবদনি নাইবসহ ফজলহক ফারুকি ও ওমরজাই বিশ্বের শীর্ষ মানের বোলারদের সারিতে। গত বছরের টি-২০ বিশ্বকাপে আফগানরা বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে দিয়েছে। দুই দলের টি-২০ লড়াইয়ে ১২ ম্যাচের মধ্যে আফগানিস্তান সাতবার জয়ী, বাংলাদেশ পাঁচবার।
জয়ের চাপ ও রানরেটের গুরুত্ব
বিএ গ্রুপে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—তিন দলেরই ২ পয়েন্ট। তবে রানরেটে আফগানিস্তান অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশের সামনে কেবল জয় নয়, রানরেট বাড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আফগানদের পরবর্তী ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার সম্ভাবনা থাকায়, বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচে বড় ব্যবধানের জয় একান্ত প্রয়োজন।
লিটন দাস ও দলীয় প্রস্তুতি
অধিনায়ক লিটন দাস বলেছেন, “এ ম্যাচ আমাদের জন্য ডু অর ডাই লড়াই।” তিনি জানালেন, দলের মনোবল বজায় রাখতে সবাই সচেষ্ট। শেষ কয়েক ম্যাচে ব্যর্থতার ঘাটতিগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য লিটনবাহিনী আজ প্রতিটি বিভাগে পূর্ণ একাগ্রতা নিয়ে নামবে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—সর্বত্রই একধরনের তীব্রতা দেখাতে হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করান, বাংলাদেশের সমন্বিত ব্যাটিং-ভিত্তি ও বল হাতে কৌশলগত পরিবর্তন ছাড়া আফগানদের চাপে ফেলা কঠিন। তবে ক্রিকেটের অপ্রত্যাশিত মোড় ও লিটনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত নয়।
সমর্থকদের অপেক্ষা
আজ রাত সাড়ে ৮টার ম্যাচে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। আফগানিস্তানের জয় শ্রীলঙ্কার স্বস্তি নিশ্চিত করবে, কিন্তু বাংলাদেশের জয় একমাত্র সুপারফোরের পথে ফিরিয়ে আনবে। মাঠে লিটনদের ‘ডু অর ডাই’ মানসিকতা কি কাজ করবে, নাকি সমর্থকদের হতাশার আরও একটি রাত অপেক্ষা করবে—সেই উত্তরের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে আছে আবুধাবির মাঠের দিকে।
এই ম্যাচ কেবল একটি লড়াই নয়, এটি টাইগারদের মর্যাদা, সুপারফোরের আশা এবং জাতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য এক পরীক্ষার ঘণ্টা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ