
ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। নগরবাসী অতিষ্ঠ, এমনকি নিজেদের রক্ষার জন্য আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে মোহাম্মদপুরের হাক্কারপাড় ব্রিজ এবং তুরাগ নদীর ওয়াকওয়ে এমন স্থান হয়ে উঠেছে যেখানে ছিনতাই নিয়মিত ঘটনা। এক সপ্তাহের মধ্যে গণপিটুনিতে মারা গেছে তিন ছিনতাইকারী, আহত হয়েছে আরও তিনজন।
৩১ আগস্ট বিকেল ৫:৩০ মিনিটে হাক্কারপাড় ব্রিজের পাশে এক অটোরিকশায় এসে পৌঁছায় একজন যাত্রী। মুহূর্তের মধ্যে দুই যুবক ধারালো অস্ত্রের মুখে তার সব সম্পদ লুট করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, ব্রিজটি ছিনতাইকারীদের জন্য নিয়মিত হটস্পট। যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে চলাচল করতে বাধ্য।
নবীনগর হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর সড়কে ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে দুই ছিনতাইকারীকে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনিতে হত্যা করে। এর আগে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এই দুই ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে নগদ টাকা লুট করছে। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, তারা বাড়ির বাইরে ডেকে আনা হয়েছিল, কিন্তু অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণও রয়েছে।
মোহাম্মদপুরের আরেকটি ছিনতাই স্পট তুরাগ নদীর ওয়াকওয়ে, যেখানে ৮ সেপ্টেম্বর আরও দুই ছিনতাইকারীকে গণপিটুনিতে মারা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, এই ওয়াকওয়েতে নিয়মিত ছিনতাই হয়।
শুধু পথচারী নয়, নগদ টাকা বহনকারী ব্যক্তি এবং কুরিয়ার ডেলিভারি ম্যানরাও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ৬ সেপ্টেম্বর বসিলায় এক কুরিয়ার ডেলিভারি ম্যানকে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করা হয় এবং ১৩ সেপ্টেম্বর তুরাগ হাউজিংয়ে ৬০ হাজার টাকা ছিনতাই হয়। অভিযোগ আছে, যে ব্যক্তি মামলা করতে গিয়েছিলেন, তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
একের পর এক ছিনতাইয়ের কারণে এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা বাহিনী ব্যর্থ হলে নাগরিকদের বাধ্য হয়ে নিজের জীবনের জন্য পদক্ষেপ নিতে হয়।”
এক সপ্তাহের মধ্যে তিনজন ছিনতাইকারী গণপিটুনিতে মারা গেছেন, আর আহত হয়েছে আরও তিনজন। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক রয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে। র্যাব-২ এর অধিনায়ক মো. খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, ৭০০ জনের বেশি ছিনতাইকারী গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান, হাজারীবাগ, আদাবরসহ অপরাধপ্রবণ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহল জোরদার করা হয়েছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইবনে মিজান জানান, শহরতলি এলাকায় মনোযোগ দিলে অপরাধীরা মেইন রোডে চলে আসে, আবার মেইন রোডে নজর দিলে তারা শহরতলায় চলে যায়। তাই নজরদারি সর্বোচ্চ স্তরে রাখা হচ্ছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিয়মিত টহল এবং নজরদারি বাড়ালে ছিনতাইয়ের ঘটনা কমানো সম্ভব। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে মোহাম্মদপুর অপরাধমুক্ত এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সারসংক্ষেপে, মোহাম্মদপুরের হাক্কারপাড় ব্রিজ এবং তুরাগ নদীর ওয়াকওয়ে সহ গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসী আতঙ্কিত, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নিয়েছে, এবং নাগরিকরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য গণপিটুনি ও নিজস্ব পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ