
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনায় দ্রুতই একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। কমিশনের উদ্দেশ্য কোনোভাবেই এই কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করা নয়, বরং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে সনদ বাস্তবায়ন শুরু করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা চাই, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে।”
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনার তৃতীয় ধাপের তৃতীয় দিনের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ সম্পর্কে কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সবই অবগত আছেন এবং বিষয়টির অগ্রগতি তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
তিনি জানান, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা বিদেশ সফরে যাবেন। এর আগে কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে তাকে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেওয়া হবে।
আলী রীয়াজ বৈঠকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নানা দিক তুলে ধরেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ছয় ধরনের পরামর্শ এসেছে। এর মধ্যে কেউ বলছে, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সনদ কার্যকর করতে হবে। আবার অনেক দল গণভোটের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। কেউ কেউ সংসদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, কমিশনের পক্ষ থেকে একটি খসড়া প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছিল। দলগুলো সেখান থেকে নিজেদের মতামত জানায়। কমিশন সেসব মতামত ছয় ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণ করেছে। কিছু প্রস্তাব সরাসরি নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে চিহ্নিত হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমাদের সংবিধান-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্যানেল বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তারা দুটো সুপারিশ করেছেন—একটি হলো বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করা, অন্যটি গণভোট আয়োজন করা। সব দিক বিবেচনা করে আমরা একটি সমন্বিত সুপারিশ সরকারকে উপস্থাপন করেছি।”
তার মতে, সরকার চাইলে একাধিক পথ বেছে নিতে পারে। বাস্তবায়নের জন্য কোন পথ সবচেয়ে সহজ হবে, সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি জানান, সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। তিনি বলেন, “আমাদের কাজ হচ্ছে আলোচনা শেষে সুপারিশ তৈরি করা। আমরা সময়ক্ষেপণ করতে চাই না। জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে দ্রুত সমাধান, আমরা সেটিই নিশ্চিত করতে চাই।”
আলী রীয়াজ জানান, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দুজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে বলা হয়েছিল। বেশির ভাগ দলই ইতিমধ্যেই নাম পাঠিয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক দলগুলোও সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আন্তরিক।
তিনি বলেন, “আমরা চাই সরকার প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা নেবে, যাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন শুরু করা যায়। এই সনদ কেবল একটি দল বা সরকারের নয়, বরং সার্বিক রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রতীক হয়ে উঠবে।”
জুলাই সনদকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক মহলও এ উদ্যোগকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি কেবল একটি রাজনৈতিক চুক্তি নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামো সুদৃঢ় করার একটি রূপরেখা।
বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ আবারও জোর দিয়ে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সনদের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য তৈরি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ