
ছবি: সংগৃহীত
দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সর্বশেষ বৈঠকে মোট ৮৩৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ১৩টি নতুন ও সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এ অনুমোদনের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন, বাণিজ্য, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পর্যটন খাতসহ বহু ক্ষেত্রে উন্নয়ন কার্যক্রম আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনুস সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ৮৩৩৩ কোটি টাকার যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪৪৩৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১২২৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৬৭০ কোটি ৯ লাখ টাকা।
সভায় অনুমোদিত ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—
-
নারীর ক্ষমতায়ন: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের "তথ্য আপা" প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা তথ্যপ্রযুক্তি সেবা গ্রহণ ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
-
শিক্ষা ও গবেষণা: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) গবেষণাগার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এর ফলে দেশের প্রকৌশল শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে এবং গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
-
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০০০ হর্স পাওয়ার রিগ ক্রয়, শাহবাজপুর ও ভোলা এলাকায় নতুন কূপ খনন এবং নেসকো এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে নতুন গতি আসবে।
-
বাণিজ্য সম্প্রসারণ: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের "এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস" (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প রফতানি আয় বাড়াতে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা জোরদার করতে সহায়ক হবে।
-
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প অনুমোদন পায়। এতে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় নতুন অবকাঠামো তৈরি হবে।
-
বস্ত্র খাত: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতায় শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল ও যমুনা স্পেশালাইজড জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল মিল প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন বাড়বে এবং পাটশিল্পে পুনর্জাগরণ ঘটবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
-
খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২)
-
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প
-
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী ও স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প
এ ছাড়া সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত) এবং মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা সভায় আরও কিছু প্রকল্পের অনুমোদনের বিষয় অবহিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে—
-
ফসল উৎপাদন ব্যয় জরিপ-২০২৫
-
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন
-
পার্বত্য চট্টগ্রামে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প
-
সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প
-
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ প্রকল্প
-
দেশের বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প
-
পিরোজপুরে নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণ
-
রামু সেনানিবাসে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন
-
সিলেট সেনানিবাসে অফিসার্স বাসস্থান নির্মাণ
-
উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন প্রকল্প
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দা সেতুর কাছে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ
সভায় উপস্থিত উপদেষ্টারা জানান, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে, অন্যদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন, অবকাঠামো এবং জ্বালানি খাতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
সরকারি নীতিনির্ধারকদের মতে, অনুমোদিত প্রকল্পগুলো দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন যাত্রাকে আরও বেগবান করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ