
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে আমদানি পণ্য ছাড়করণের প্রক্রিয়ায় ঘুষ দাবি ও গ্রহণের অভিযোগে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) রাজীব রায় এবং তার সহযোগী মাইনুদ্দীনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস প্রাঙ্গণে দুদকের বিশেষ অভিযানে তারা ধরা পড়েন। ঘটনাস্থলেই ঘুষের ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়, যা আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, হোমল্যান্ড প্লাস্টিক স্যু ইন্ডাস্ট্রিজের প্রোপাইটর আমির হোসেন সম্প্রতি জাপান থেকে ৬ হাজার ৪২৮.১০ মার্কিন ডলার মূল্যের “Break Acrylic Mixed Plastic Waste and Scrap” আমদানি করেন। আমদানির নিয়ম অনুযায়ী তিনি কাগজপত্র দাখিল করে শুল্কায়নের জন্য কাস্টমস হাউসের সেকশন-৭(বি)-তে আবেদন করেন। সেখানে দায়িত্বে ছিলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাজীব রায় ও মো. ছারওয়ার উদ্দিন।
অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত শুল্ক হার অনুযায়ী পণ্য ছাড়করণের পরিবর্তে রাজস্ব কর্মকর্তা রাজীব রায় এবং তার সহকর্মীরা অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমদানিকারক যদি টাকা না দেন, তবে পণ্য ছাড়করণে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব এবং শেষ পর্যন্ত তা নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী আমির হোসেন সরাসরি দুদকের চট্টগ্রাম-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই শেষে দুদক একটি ফাঁদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. আক্তারুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ টিম মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কাস্টমস হাউস প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। অভিযানের সময় আমদানিকারকের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের প্রক্রিয়ায় জড়িত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাজীব রায় ও তার সহযোগী মাইনুদ্দীনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ঘুষের ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
অভিযান শেষে আলামতের তালিকা প্রণয়ন, স্বাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ এবং অন্যান্য প্রাথমিক আইনানুগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়।
অভিযানের বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আক্তারুল ইসলাম বলেন, “আমদানিকারকের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ফাঁদ অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে ঘুষের টাকাসহ দুইজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তারা যখন দায়িত্ব পালনের নামে এভাবে ঘুষ দাবি করেন, তখন তা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করে না, ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতিরও কারণ হয়।”
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দেশের আমদানি-রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এখানে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য এবং জালিয়াতির নানা অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রায়ই অভিযোগ করে আসছেন, নির্ধারিত শুল্ক প্রদান করলেও নানা অজুহাতে কর্মকর্তারা ঘুষ দাবি করেন। অনেক সময় পণ্য ছাড়ে অযথা বিলম্ব করা হয়, যার ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়।
অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দুদকের এ ধরনের অভিযান নিয়মিত হলে আমদানিকারকরা স্বস্তি পাবেন। একই সঙ্গে কাস্টমস হাউসে ঘুষ বাণিজ্যের প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটক রাজস্ব কর্মকর্তা রাজীব রায় এবং তার সহযোগী মাইনুদ্দীনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে যেসব কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাস্টমস হাউসের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎপরতা বাড়ানো জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে নিয়মিত নজরদারি চালানো গেলে বন্দর ও কাস্টমস এলাকায় দুর্নীতি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী মহল।
বাংলাবার্তা/এসজে