
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএসের ৪৭তম প্রিলিমিনারি আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় শুরু হয়েছে। একই সময়ে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের ২৫৬টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই পরীক্ষা। টানা দুই ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিতব্য এ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন প্রায় তিন লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী। চাকরিজীবনে প্রবেশের অন্যতম বড় এই সুযোগকে ঘিরে দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষা দেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও জনপ্রিয় নিয়োগ প্রক্রিয়া। তরুণ-তরুণীদের কাছে বিসিএস কেবল একটি চাকরি নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় সেবা ও মর্যাদার প্রতীক। প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কাস্টমস, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্যাডারে যোগদানের জন্য প্রতিবছর লাখো পরীক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তাই বিসিএস পরীক্ষা দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের কাছে জীবনের মোড় ঘোরানো একটি অধ্যায়।
এবারের ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে—ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। মোট ২৫৬টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয়েছে পরীক্ষা। সরকারি কর্ম কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মোট নিবন্ধিত পরীক্ষার্থী সংখ্যা তিন লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন। এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থী অংশ নেওয়ায় এটিকে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। অর্থাৎ, নির্ধারিত সময় মাত্র দুই ঘণ্টা। তবে এই দুই ঘণ্টায় ২০০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) সমাধান করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। প্রতিটি সঠিক উত্তরে পাওয়া যাবে এক নম্বর। অন্যদিকে, প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কেটে নেওয়া হবে শূন্য দশমিক পাঁচ নম্বর। ফলে নেতিবাচক মার্কিংয়ের কারণে সঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি সতর্কতাও প্রয়োজন।
প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রে থাকবে চারটি সেট—১, ২, ৩ ও ৪। পরীক্ষার্থী যে সেট নম্বরের উত্তরপত্র পাবেন, তাঁকে সে সেটের প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনিয়মের সুযোগ কমানোর চেষ্টা করছে কমিশন।
পিএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। এর পর কোনো পরীক্ষার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে উল্লেখিত তথ্য ও ছবি হাজিরা তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে প্রার্থিতা বাতিল হবে এবং প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বই-পুস্তক, ঘড়ি, মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর, ব্যাগ, গহনা ও যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা যাবে না। কেন্দ্রে প্রবেশের সময় মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। নিষিদ্ধ সামগ্রীসহ ধরা পড়লে অথবা নকলের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্যও রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রদান করা হবে শ্রুতিলেখক এবং তাঁদের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। অন্যান্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট বাড়তি সময় পাবেন।
এ ছাড়া, যেসব পরীক্ষার্থী ইংরেজি ভার্সনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করেছিলেন, তাঁদের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র ও আসন বিন্যাস করা হয়েছে। তবে এখানে কোনো পরীক্ষার্থী চাইলে ভার্সন পরিবর্তন করতে পারবেন না।
কমিশনের নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পরীক্ষা চলাকালে অনিয়ম, অসদাচরণ বা যেকোনো ধরনের গরমিল ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিল হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন, ২০২৩ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে নকল, জাল প্রবেশপত্র ব্যবহার বা প্রতারণার মতো কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পিএসসি।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, বিসিএস তাঁদের স্বপ্ন পূরণের বড় সুযোগ। প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র বা শিক্ষা ক্যাডারে প্রবেশের আশা নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনেকেই চাকরির পাশাপাশি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ফাঁকে এই পরীক্ষার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন।
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণই প্রমাণ করে বিসিএস বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে কতটা আকর্ষণীয়। তবে প্রতিযোগিতা এতটাই কঠিন যে, খুব কম সংখ্যক প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ক্যাডার পদে নির্বাচিত হতে পারবেন।
পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি। এছাড়া ১২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন যাতে কোনো অনিয়ম না ঘটে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ