
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর-পরবর্তী জীবনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ করার জন্য সরকার পেনশন ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে পেনশন-সংক্রান্ত নানা জটিলতা নিরসন এবং পেনশনভোগীদের কল্যাণমূলক সেবা বাড়াতে একাধিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর-পরবর্তী সময়ে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তার অনেকাংশই নিরসন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকে সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তগুলোর একটি হলো শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য পেনশন পুনঃস্থাপনের অপেক্ষাকাল কমানো। বর্তমানে এই সময়সীমা ১৫ বছর হলেও নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সেটি কমিয়ে ১০ বছরে আনা হবে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগকে জাতীয় বেতন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, যদি প্রস্তাব অনুমোদন হয়, তবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা আগের চেয়ে পাঁচ বছর আগে পুনরায় তাদের পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
বর্তমান নিয়মে, কোনো পেনশনভোগী মারা গেলে তার প্রথম স্ত্রী বা স্বামী আজীবন পারিবারিক পেনশন পান। কিন্তু যদি পেনশনভোগী ব্যক্তি দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকেন, তবে দ্বিতীয় স্ত্রী বা স্বামী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষেত্রেও পারিবারিক পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে। এটি কার্যকর হলে অনেক পরিবার আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পাবে।
এ ছাড়া যদি শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী পেনশন পুনঃস্থাপনের আগে মারা যান, তবে তার স্বামী/স্ত্রী বা বৈধ উত্তরাধিকারীদের পেনশন সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে অর্থ বিভাগকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অবসর-পরবর্তী সময়ে অনেক পেনশনভোগী জটিল রোগে আক্রান্ত হন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে তাদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এর ফলে অসুস্থ পেনশনভোগীরা রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেয়ে জীবনযাত্রায় স্বস্তি পাবেন।
প্রবাসে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পেনশন-সংক্রান্ত কাগজপত্র ও আনুষ্ঠানিকতার স্বাক্ষরদান নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ ধরনের সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে সহজ প্রক্রিয়া চালু করা হবে। এতে বিদেশে থাকা কর্মকর্তাদের জন্য পেনশন প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের জন্য উৎসব ভাতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাবও আলোচনায় উঠে এসেছে। পাশাপাশি পেনশন পুনঃস্থাপনের পর যাতে পূর্ণমাত্রায় ভাতাসংক্রান্ত সুবিধা যোগ হয়, সে বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ পেনশনাররা শুধু মাসিক ভাতা নয়, বরং অন্যান্য ভাতাও আগের নিয়মে পেতে পারবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এর আগে সময় সময়ে পেনশন-সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “পেনশনভোগীরা দীর্ঘ কর্মজীবনে রাষ্ট্রকে সেবা দিয়ে থাকেন। অবসরের পর তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এজন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে আমরা কাজ করছি।”
সরকারি চাকরিজীবীরা কর্মজীবনের দীর্ঘ সময় দেশের প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের শ্রম ও মেধা ব্যয় করেন। অবসরের পর তাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা। সরকারের সাম্প্রতিক এই উদ্যোগ সেই দায়বদ্ধতাকেই আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিফলিত করছে।
চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এসব প্রস্তাব কার্যকর হলে লাখ লাখ সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও তাদের পরিবার উপকৃত হবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সংস্কার কেবল পেনশনভোগীদের জীবনমান উন্নত করবে না, বরং সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যেও ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চয়তা তৈরি করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ