
ছবি: সংগৃহীত
গাজা প্যাসেজের তীব্র পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে হামলা চালিয়েছে গাজার এলাকায়, বিশেষ করে সেই সব স্থানের দিকে যেখানে এখনো কিছু হাসপাতাল সচল রয়েছে। আল জাজিরা সূত্রে জানা গেছে, এই হামলা স্বাস্থ্যসেবা ও বেসামরিকদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। একই সঙ্গে গাজা সিটিতে স্থল অভিযান ও বিমান হামলার কারণে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চিকিৎসা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, শুধু বৃহস্পতিবারই ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল আল-শিফা ও আল-আহলি হাসপাতালের আশপাশের এলাকা, যা খাদ্যাভাবে কষ্ট পাওয়া, অসুস্থ ও আহত মানুষের জন্য শেষ ভরসার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছিল।
হাসপাতালের আশপাশে মিসাইল হামলায় আল-শিফার বাইরে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে আল-আহলি হাসপাতালের কাছে আলাদা হামলায় আরও চারজন মারা গেছেন। স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, আহতদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে, এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় পেতে কষ্ট হচ্ছে।
হামাস এই হামলাকে ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, এই হামলা ঘটেছে এমন এক সময়ে যখন জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। হামাসের দাবি, এই হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ও অবজ্ঞার বার্তা বহন করছে।
যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মন্ত্রী হ্যামিশ ফ্যালকনার উল্লেখ করেছেন, শিশুদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত আল-রান্তিসি হাসপাতাল লক্ষ্য করে রাতভর বোমাবর্ষণ হয়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ইনকিউবেটরে থাকা নবজাতক আর ডায়ালাইসিসে থাকা শিশুদের ওপর কোনোভাবেই হামলা হওয়া উচিত নয়।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিশু হাসপাতালটি বৃহস্পতিবার তিনবার হামলার শিকার হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৪০ জন রোগী পালাতে বাধ্য হয়েছেন, তবে আরও ৪০ জন রোগী ও কর্মী ভেতরেই আটকে পড়েছেন। হাসপাতালের কর্মীরা জানান, তারা জীবন রক্ষার জন্য সীমাহীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, হামলার ফলে গাজার বিভিন্ন এলাকা এখন আতঙ্কগ্রস্ত। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে, এবং মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। বিশেষ করে শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধদের মধ্যে আতঙ্ক ও মানসিক চাপ বিরাজ করছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, আহতদের দ্রুত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হার বাড়ছে। হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীরা সীমিত সংস্থান ও ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা সতর্ক করেছেন, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে যাবে।
ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, বেসামরিকদের ওপর লক্ষ্যবস্তু হামলা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সীমিত ছিল। হাসপাতালের কাছে হামলা চলতে থাকলে চিকিৎসা পরিষেবা পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে হুমকি দেখাচ্ছেন যে, যদি দ্রুত শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না আসে, তবে মানবিক সঙ্কট আরও ভয়ঙ্কর মাত্রা নিতে পারে।
গাজার হাসপাতাল ও বেসামরিকদের উপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধ বিধি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে আহত ও অসুস্থদের চিকিৎসা ব্যাহত হবে। পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তৎপর না হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ