
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন।
আলী রীয়াজ জানান, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সংগ্রহ করে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়। প্যানেলটি সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘সাংবিধানিক আদেশ’ (Constitutional Order) জারি করার সুপারিশ করেছে। এই সাংবিধানিক আদেশে সংবিধানের কাঠামো ও কার্যকারিতার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রধান পরিবর্তনগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রফেসর রীয়াজ বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংবিধানিক আদেশটি শুধু সংসদে পাস করলেই হবে না, বরং জনগণের প্রত্যক্ষ অনুমোদন প্রয়োজন। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনই একইসঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব এসেছে। এতে জনগণের কাছে সনদের সংস্কার সংক্রান্ত প্রশ্ন রাখা হবে। ভোটের মাধ্যমে জনসমর্থন পেলে আদেশটি বৈধ বলে গণ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, “গণভোটে জনগণের সমর্থন পাওয়া গেলে ওই সাংবিধানিক আদেশ কার্যকর হবে এবং ঘোষণার দিন থেকে রেট্রোস্পেকটিভভাবে (পূর্বপ্রযোজ্যভাবে) বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, কার্যকারিতা ঘোষণার তারিখ থেকেই এটি বাস্তবায়নযোগ্য হবে।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সহসভাপতি জানান, সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয় এমন সংস্কারগুলো রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে। এগুলো অধ্যাদেশ বা সরকারি আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সংবিধান সংশোধনের মতো জটিল সংস্কারের ক্ষেত্রে এখনো চূড়ান্ত ঐকমত্য গঠিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হলে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কিছু রাজনৈতিক দল এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, অন্য কিছু দল সংশয় প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতে পারে এবং ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। তবে সমর্থনকারীদের যুক্তি হলো, এটি জনগণের মতামত যাচাইয়ের একটি কার্যকর পদ্ধতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।
আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিকল্প প্রস্তাবগুলোও বিবেচনা করছে। কমিশন আশা করছে, দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বজায় রেখে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা চাইছি সব পক্ষের অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি করতে। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই এই সনদ বাস্তবায়ন সফল হবে।”
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ মূলত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ এবং সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি রূপরেখা। এটি বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব যদি গ্রহণ করা হয়, তবে বাংলাদেশে একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন হবে, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ