
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩১ বিলিয়ন ডলারের উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী এ সময় দেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এই তথ্য জানিয়েছেন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা এর আগে ছিল ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়ে ২৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের তুলনায় ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট রিজার্ভের একটি আলাদা হিসাব রয়েছে, যা প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিট রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
একটি দেশের জন্য কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকা জরুরি। বাংলাদেশ এই সীমারেখায় অবস্থান করছে। প্রবাসী আয়, রপ্তানি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও ঋণের মাধ্যমে রিজার্ভ গঠিত হয়; আর আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন, শিক্ষার্থী ও পর্যটক খরচের কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বেরিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি, বরং ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার ক্রয় করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২ সেপ্টেম্বর আটটি ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কেনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি) এবং আগস্টে এসেছে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার (প্রায় ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা)। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ছিল ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
গত ১০ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৩ সালের জুনে রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে এবং ওই বছরের অক্টোবরেই তা ছুঁয়েছিল ৪০ বিলিয়ন। এরপর, ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। তবে পরবর্তীতে ডলার সংকটের কারণে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমতে থাকে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক সংকেত। রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘমেয়াদে বৈদেশিক ঋণ এবং আমদানি চাপ রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিকতা রিজার্ভ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর ফলে দেশের মুদ্রাবাজারে সংকট এড়ানো সম্ভব হচ্ছে এবং ব্যাংকগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক লেনদেনে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও জানিয়েছে, বর্তমান রিজার্ভ দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রমে সহায়ক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ