
ছবি: সংগৃহীত
ডিমকে বলা হয় ‘সুপারফুড’। এতে একদিকে যেমন প্রচুর প্রোটিন আছে, অন্যদিকে ভিটামিন, মিনারেল এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডও পাওয়া যায়। বিশেষ করে ডিমের কুসুমে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই, বি১২, আয়রন, ফসফরাসসহ নানা ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ডিমের ভূমিকা অনেক।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ডিমের কুসুম সবার জন্য সমান উপকারী। বিশেষ করে সকালে নাশতায় ডিম খাওয়ার সময় কুসুমের পরিমাণ ও খাওয়ার ধরন নিয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়। কারণ শরীরের অবস্থা, বয়স, পূর্বের রোগের ইতিহাস এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে কুসুম উপকারের পাশাপাশি কখনো কখনো ক্ষতিও করতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন, যেসব মানুষ হার্ট, লিভার বা ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় ভোগেন কিংবা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য সকালে ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলা বা খুব সীমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো।
কারা সকালে ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলবেন?
১. হাই কোলেস্টেরল রোগী
ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রতিটি কুসুমে প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। যাদের রক্তে আগে থেকেই এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের জন্য কুসুম বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। নিয়মিত খেলে ধমনিতে চর্বি জমতে শুরু করে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. হৃদরোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা
যারা ইতিমধ্যে হার্টের রোগে ভুগছেন বা পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে, তাদের জন্য সকালে ডিমের কুসুম খাওয়াটা নিরাপদ নয়। এতে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ধরনের রোগীরা কুসুম খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তাররা পুরোপুরি নিষেধ করেন, আবার কারও জন্য সীমিত খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৩. ডায়াবেটিস রোগী
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাদ্যতালিকায় কোলেস্টেরল ও ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। ডিমের কুসুমে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা সকালে কুসুম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে কেবল ডিমের সাদা অংশ খাওয়াই উত্তম।
৪. স্থূলতা বা ওজন কমাতে আগ্রহীরা
যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য ডিমের কুসুম উপযুক্ত নয়। কারণ একেকটি কুসুমে থাকে বেশি ক্যালরি ও ফ্যাট, যা ওজন কমানোর পথে বাধা হতে পারে। তাই এ ধরনের মানুষদের শুধু ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সাদা অংশে প্রোটিন বেশি থাকে, ক্যালরি ও ফ্যাট তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এতে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।
৫. লিভার ও গলব্লাডার সমস্যায় ভোগা মানুষ
লিভার বা পিত্তথলির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কুসুম হজম করা কঠিন হতে পারে। যেমন—ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস, সিরোসিস বা পিত্তথলিতে পাথর থাকলে কুসুম খেলে হজমের সমস্যা, পেটে অস্বস্তি কিংবা ব্যথা বাড়তে পারে। চিকিৎসকেরা এ ধরনের রোগীদের খাদ্যতালিকায় কুসুম কমাতে বা বাদ দিতে বলেন।
না, বিষয়টি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সুস্থ, স্বাভাবিক ওজনের, হার্ট বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি না থাকা মানুষদের জন্য ডিমের কুসুম উপকারী হতে পারে। সপ্তাহে কয়েক দিন, প্রতিদিন একটি করে কুসুম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং এতে থাকা ভিটামিন এ, ডি, ই, বি১২, আয়রন ও স্বাস্থ্যকর ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত কুসুম যেকোনো ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
ডিম একটি চমৎকার খাবার, কিন্তু সবার শরীর একভাবে সেটিকে গ্রহণ করে না। বিশেষ করে সকালে নাশতার সময় কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। হাই কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা কিংবা লিভার ও গলব্লাডারের সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষদের জন্য কুসুম এড়িয়ে চলা নিরাপদ। আর সুস্থ মানুষরাও যেন পরিমিত মাত্রায় খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখেন।
সঠিক পরিমাণে ডিম খেলে এটি হবে উপকারের ভান্ডার, আর অবহেলায় বা অজ্ঞতায় খেলে উল্টো ক্ষতির কারণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ