
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম আরও এক ধাপ এগিয়ে নিল। কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে, আগামী ১৮ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি—ভোটার তালিকা—চূড়ান্ত রূপ পেতে যাচ্ছে। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চিঠিটি বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হয়।
চিঠি অনুযায়ী, প্রথমে ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে আগামী ১ নভেম্বর। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নাগরিকরা তাদের দাবি, আপত্তি ও সংশোধনের আবেদন জমা দিতে পারবেন। এ সুযোগ চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। এর পরের দিন, অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর আবেদন ও আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করা হবে। সবশেষে, ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে দেশের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫৯৪ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন এবং নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটারের সংখ্যা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১ হাজার ২৩০ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংখ্যা শুধু দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রাণশক্তি নয়, বরং নারী-পুরুষ সমতার প্রতিফলনও।
ভোটার তালিকা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একটি। কারণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের জন্য একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা অপরিহার্য। খসড়া প্রকাশ থেকে শুরু করে আপত্তি গ্রহণ, যাচাই-বাছাই, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ—সব কিছুই নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে ইসি। কমিশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এতে ভোটারদের আস্থা বাড়বে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া হবে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের এই সময়সূচি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিটি দলই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কমিশনের কার্যক্রম। বিশেষ করে নতুন ভোটার যোগ, মৃত ভোটার বাদ এবং নাম-ঠিকানা সংশোধনের মতো বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলের ভোটের সমীকরণেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে ভুলত্রুটি কমানো যায়। তাছাড়া ভোটারদের সুবিধার্থে অনলাইনেও সংশোধন ও যাচাইয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, এতে করে অনেক অভিযোগ আগেভাগেই সমাধান হয়ে যাবে।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরপরই ইসি নির্বাচন-সংক্রান্ত অন্যান্য প্রস্তুতি যেমন—নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্তকরণ এবং ভোটকর্মী নিয়োগের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেবে। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সময়সূচি যথাযথভাবে মেনে চললে নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ