
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি চলচ্চিত্র জগতে নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে একটি আবেগঘন গল্পভিত্তিক সিনেমা— ‘সাবা’। মা ও মেয়ের ভালোবাসা, ত্যাগ আর সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি দেশের দর্শকদের সামনে হাজির হচ্ছে দীর্ঘ অপেক্ষার পর। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হওয়ার পর এবার এটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে ছবিটি।
সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র সাবা—এক তরুণী, যে অসুস্থ মায়ের দেখাশোনায় ব্যস্ত প্রতিটি মুহূর্ত। মধ্যবিত্ত জীবনের সীমাবদ্ধতা, আর্থিক অনটন, সামাজিক চাপ—সব কিছুর মাঝেই মায়ের প্রতি অটুট ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ তাকে লড়াই করতে প্ররোচিত করে। এখানে মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী, আর মায়ের চরিত্রে দেখা যাবে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীকে।
‘সাবা’-র গল্প শুধু কাল্পনিক নয়; এতে রয়েছে নির্মাতা মাকসুদ হোসেন ও তার পরিবারের জীবনের ছোঁয়া। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, প্রায় পঁচিশ বছর আগে ঢাকায় তার স্ত্রী ত্রিলোরা খান এবং তার মা এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে ত্রিলোরার মা হয়ে পড়েন প্যারাপ্লেজিক, অর্থাৎ হুইলচেয়ারে বন্দি জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। প্রতিদিনের যত্নের জন্য তাকে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হতো মেয়ে ও স্বামীর ওপর।
ত্রিলোরার বাবার মৃত্যুর পর আরও কঠিন হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। যথেষ্ট অর্থ, ২৪ ঘণ্টার নার্সিং সাপোর্ট এবং পরিবার পাশে থাকলেও, মাকে দেখাশোনার চাপ কতটা কষ্টকর ছিল, তা কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন মাকসুদ। এই বাস্তব অভিজ্ঞতাই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে ‘সাবা’-র কাহিনি লিখতে। নির্মাতা বলেন— “আমি ভেবেছিলাম, যদি একজন তরুণীকে কল্পনা করি যে ঢাকার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে কোনো রকম সহায়তা ছাড়াই মায়ের জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করছে, তবে কেমন হবে তার গল্প? সেখান থেকেই জন্ম নেয় আমাদের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সাবা’।”
দেশে মুক্তির আগে ‘সাবা’ বিশ্বজুড়ে একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। সিনেমাটি এরই মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে বিভিন্ন দেশের দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, সিনেমাটি বিক্রি হয়েছে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ৪, অস্ট্রেলিয়ার এসবিএস এবং কাজাখস্তানের অলটারনাটিভা ডেজ প্ল্যাটফর্মে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পাওয়ার পর এবার দেশীয় দর্শকদের সামনে আসছে ছবিটি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে ‘সাবা’ নিছক একটি সিনেমা নয়; এটি এক বাস্তব সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, যা মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেহজাবীন চৌধুরীর মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও রোকেয়া প্রাচীর মতো অভিজ্ঞ শিল্পীর অভিনয় দর্শকদের আবেগতাড়িত করবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এখন শুধু দর্শকের অপেক্ষা। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে ‘সাবা’। পরবর্তীতে সারা দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
বাংলাদেশি সিনেমায় মা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র খুব বেশি দেখা যায় না। সেই শূন্যতা পূরণ করতেই হয়তো আসছে ‘সাবা’। নির্মাতা মাকসুদ হোসেন আশা করছেন, আন্তর্জাতিক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দেশীয় দর্শকরাও ছবিটি গ্রহণ করবেন ভালোবাসায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ