
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় আবারও রক্তাক্ত হলো সাধারণ মানুষের জীবন। চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, শনিবার মাত্র একদিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা ও গোলাবর্ষণে অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের পরিবারের কয়েকজন সদস্য এবং উত্তর গাজা শহর থেকে পালানোর চেষ্টা করা শরণার্থী বহনকারী একটি ট্রাকে থাকা চারজন।
গাজার স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আহতদের আর্তচিৎকারে চারপাশ ভরে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বহু মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ হামলার ধ্বংসস্তূপে দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। একাধিক শিশু, নারী ও বৃদ্ধও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহর দখলের লক্ষ্যে টানা বিমান ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে। এ অভিযানে আবাসিক ভবন, স্কুলে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী কেন্দ্র, বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু, এমনকি সামরিক নির্দেশে গাজা শহর ছেড়ে দক্ষিণের দিকে যাওয়া মানুষের ট্রাকও রক্ষা পায়নি। এসব হামলায় একসঙ্গে অন্তত ৭৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, গাজা শহরে বর্তমানে কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। বহু পরিবার দক্ষিণের তথাকথিত ‘কনসেনট্রেশন জোনে’ ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ ধরনের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ৪০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হাসপাতাল, ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্স—সবই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এতে জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রায় ভেঙে পড়েছে।
গাজার চিকিৎসক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংস করে দিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে। আহতদের সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ডাক্তার, ওষুধ, বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি আর নেই। অনেক হাসপাতাল মরদেহ সংরক্ষণের জন্য পর্যন্ত জায়গা পাচ্ছে না।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই গাজায় বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনাকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র ও সাধারণ মানুষের ট্রাকে বোমা বর্ষণ নিছক ‘সামরিক অভিযান’ নয়; এটি স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ।
একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজায় বেসামরিক জনগণকে দক্ষিণে ঠেলে দিয়ে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে ইসরায়েল, যা গণবসতি ধ্বংস এবং জাতিগত নিধনের কৌশলের অংশ।
এখন পর্যন্ত চলমান এই যুদ্ধে গাজার প্রায় সব নাগরিকই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন, ক্ষুধার্ত এবং পানীয় জলের তীব্র সংকটে ভুগছে। একদিনে ৯১ জন নিহতের সাম্প্রতিক এই ঘটনা গাজার মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করেছে।
চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও কার্যকর হস্তক্ষেপ না এলে গাজায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। তারা বলছেন, প্রতিদিন নতুন করে লাশ বহন করা হচ্ছে, কিন্তু দুনিয়া নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ