
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সম্ভাব্য ঘোষণা দিতে পারেন। স্থানীয় সময় বিকেলের দিকে স্টারমার প্রশাসন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করতে পারে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের সংঘাত সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জানিয়েছিলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্য সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় পরিস্থিতির অবনতি এবং চলমান সহিংসতা তাদের অবস্থান পুনঃমূল্যায়নের জন্য প্রভাবিত করেছে। গাজায় দুর্ভিক্ষ, নাগরিকদের ওপর হামলা ও মানবিক সংকটের চিত্র সরাসরি স্টারমারের প্রশাসনকে উদ্বিগ্ন করেছে, যা তিনি ‘অসহনীয় পরিস্থিতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, যদি ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে, দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী শান্তি স্থাপনে চুক্তি করতে বা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে রাজি না হয়, তবে যুক্তরাজ্য তাদের নীতি পরিবর্তন করবে এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সম্ভাব্য এই পদক্ষেপকে ইতিমধ্যেই ইসরাইল ও আন্তর্জাতিক কিছু মহল সমালোচনা করেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্ত ‘সন্ত্রাসকে পুরষ্কৃত’ করার সমান। এছাড়া গাজায় জিম্মি থাকা কিছু ইসরাইলি পরিবার ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক মহলও এ পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ সমর্থন জানিয়েছে। ফ্রান্স, পর্তুগাল, লুক্সেমবার্গ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এই নীতি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। এই দেশের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত সমাধানের প্রচেষ্টা নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে যুক্তরাজ্যের নতুন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থানও তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইলের কৌশল ও নিরাপত্তা নীতি নতুনভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা ও সমঝোতার বিষয়। যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপ যদি কার্যকর হয়, তা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে ধরা হবে। এ পদক্ষেপ ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক নৈতিক সমর্থনকে আরও শক্তিশালী করবে, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ